মাল্টিমিডিয়া থেকে স্মার্টফোন: সামনে সুপারফোন?
প্রযুক্তি ডেস্ক : একটি জেনারেশন বদলে যাওয়ার সাক্ষী আপনি। কখনো ব্যাপারটা এভাবে ভেবে দেখেছেন? এই বদলে যাওয়া জেনারেশনের সঙ্গে আপনি নিজেও কতটা বদলেছেন, সেটা কিন্তু সেভাবে ভেবে দেখেননি? আসলে মোবাইল ফোন শুধু নিজেই বদলে যায়নি বদলে দিয়েছে আপনার পৃথিবী। অন্য কোনো ব্যবহার্য ডিভাইস কিন্তু আপনার জীবনে এভাবে এতটা পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়নি।
একসময় প্রায় প্রতিটি বাসায় থাকতো উন্নতমানের সাউন্ডসিস্টেম। বিকেলে বা সন্ধ্যায় বেজে উঠতো চেনা কোনো সুর। কেউ মেতে থাকতো জনপ্রিয় ব্যান্ড সংগীতে কেউবা সমসাময়িক হিন্দি গানে। কেউ বাজাতো সনি, আইওয়া বা প্যানাসনিকের বিলাসবহুল সাউন্ডসিস্টেমে। কেউবা স্থানীয়ভাবে তৈরি কালো রঙের বিশাল স্পিকারে। এখন এই প্রচলনটা প্রায় উঠেই গেছে।
মনে করে দেখুন, পরীক্ষার আগের রাতে কতই না বিরক্ত হতেন প্রতিবেশীর জোরালো গান বাজানোতে। এখন সেসব দূরের কোনো অতীত! বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যা বা রাতে আর বাজেনা রাস্তার ধারের বাড়িতে রবীন্দ্র সংগীত বা মান্না দে অথবা পুরনো ভারতীয় বাংলা গান।
এইসব না পাওয়ার পেছনে দায়ী কিন্তু একটা পাওয়া। আর সেটা হলো আপনার হাতের ‘স্মার্টফোন’। হ্যাঁ, এই স্মার্টফোন শুধু আপনার দুনিয়াই নয় বদলে দিয়েছে পুরো বিনোদনের চিত্র। এখন আর ডিভিডি বা ব্লুরে প্লেয়ার কেনার আগ্রহ নেই। কিংবা স্থানীয় ডিভিডি ক্লাবগুলোও নেই। নেই সেখানে হিন্দি ছবির লেটেস্ট কোনো পোস্টার। কারণ এখন আপনি মুভি দেখেন আপনার স্মার্টফোনে। সেখানে ইচ্ছেমতো রেজুলেশনে আপনি দেখতে পারছেন আপনার পছন্দের মুভি। ফলে কে এখন টিভি সেটের সামনে বসে থাকবে মুভি দেখার জন্যে বা ডিভিডি ভাড়া আনবে তা প্লেয়ার চালাতে?
তার চেয়ে বড় কথা আপনার রুচিতে কী পরিমাণ পরিবর্তন এসেছে সেটাও বোধকরি আপনি খেয়াল করেননি। এই যেমন একসময় আপনার মাল্টিমিডিয়া ফোনে আপনি সেট করতেন লেটেস্ট কোনো হিন্দি গানের কলি বা মিউজিক রিংটোন হিসেবে। এমনকি এসব রিংটোন বিক্রি করতে রীতিমতো পত্রিকায় কালার বিজ্ঞাপন দেয়া হতো। অথবা পছন্দের নায়ক-নায়িকার ছবিকে ১১ টাকা ৫০ পয়সায় কিনতে হতো ওয়ালপেপার হিসেবে। আবার এই রিলেটেড একটি রমরমা ব্যবসাও গড়ে উঠেছিল। তারা মোবাইলে রিংটোন, ওয়ালপেপার ইত্যাদি লোড করে ভালো আয় করতো। এখন তাদের ব্যবসাও বাদ। কারণ টাকা দিয়ে গেমস, থিম, ওয়ালপেপার, রিংটোন ইত্যাদি কেনার দিন শেষ। তখন মোবাইলের ডেটা ক্যাবল ছিল দারুন আকাঙ্ক্ষিত বস্তু। যেসব পুরনো ফোনের সঙ্গে সফটওয়্যার ও ডেটা ক্যাবল থাকতো তার অন্যরকম কদর ছিল বিক্রি করার ক্ষেত্রে! এখন আর আপনার কন্সেনট্রেশন সেদিকে নেই।
এখন মানুষের মূল আকর্ষণ অ্যাপস। আর মোবাইলের নিত্যনতুন ফিচার। অথচ একসময় আপনি দামী মোবাইল কিনেও তাতে ভিডিও করতে পারতেন মাত্র ৩০ সেকেন্ড করে, একটানা করা যেত না। সেগুলোতে থ্রিজিপি ফরম্যাটের ঝাপসা ভিডিও চালিয়েও কী আনন্দই না উপভোগ করতেন! আর এখন আপনি ভিডিও ডাউনলোড করেন ভিডিওর পিক্সেলের মান অনুসারে। একটু কম পিক্সেল হলেই সেটা আর রুচিতে হয়না!
প্রযুক্তির অগ্রগতি কিন্তু ইঙ্গিত দিচ্ছে আরো ভয়াবহ। কারণ স্মার্টফোনই যদি আমাদের বিনোদন এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার এতো ব্যাপক পরিবর্তন এনে দেয় তবে স্মার্টফোনের পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের কী পরিবর্তন দেবে? অবস্থা দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে স্মার্টফোনের যুগও বোধহয় শেষ হতে চলল! কারণ ফোন এখন আর ফোনের কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ নেই। নিত্যনতুন নানা ফিচার ফোনকে নিয়ে যাবে ‘সুপারফোনের’ পর্যায়ে।
ইউরোপ-আমেরিকায় ফোনের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে আপনার হাতে লাগানো গাছের বৃদ্ধি কতটুকু হলো তার ফলাফল। লেনোভো গুগলের পুরনো সফটওয়্যার ব্যবহার করে দিচ্ছে আরো আপডেটেট অ্যাপস। যে ফোনে আপনার রুমের ম্যাপিং তো থাকবেই এমনকি আপনার রুমের প্রতিটি জিনিস তার নখদর্পণে থাকবে। এমনকি রুমে কেউ প্রবেশ করলেও আপনাকে জানাবে! ফলে আমাদের পুরনো সাউন্ডসিস্টেম ব্যবহারহীনতার মতো আরো কত কিছু যে অকেজো হয়ে পরবে তার ইয়াত্তা নাই।
আপনি এখনই ক্যামেরার ব্যবহার প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। কারণ হাতের মোবাইলে আছে তার চেয়েও ভালো মানের ক্যামেরা। ল্যাপটপ ব্যবহার হতো লাইভ চ্যাটিং এর জন্যে সেটাও গেছে। প্রযুক্তি যেভাবে আলোর গতিতে এগোচ্ছে তাতে আর কী কী পণ্য আপনি আপনার দৈনন্দিন ব্যবহার্য তালিকা থেকে বাদ দেবেন তার জন্যেও ব্যবহার করতে হতে পারে অ্যাপস!