উত্তেজনায় আশুগঞ্জ সদর ইউপি নির্বাচন : কেন্দ্র দখল-প্রতিহতের আওয়াজ
আমিরজাদা চৌধুরী,ব্রাহ্মণবাড়িয়া : টান টান উত্তেজনা আশুগঞ্জ সদর ইউপি নির্বাচন নিয়ে। আগামীকাল শনিবার এই ইউনিয়নে ভোট। নির্বাচনে কেন্দ্র দখল,জাল ভোটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বহিরাগতদের এনে কেন্দ্র দখল,সীল মেরে ১০ টায় ভোট শেষ করার ঘোষনা দেয়া হচ্ছে ক’দিন ধরেই। বন্দরনগরীর এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদের লড়াইয়ের এবার ভিন্নমাত্রা আছে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। তারা হচ্ছেন আওয়ামীলীগের মো: সালাউদ্দিন,বিএনপি’র মো: ইদ্রিস মিয়া,জাতীয় পার্টির মো: শাহজাহান,বিকল্পধারার মো: সফিউল্লাহ,স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: মনির হোসেন ও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নূরুল ইসলাম। এ ৬ জনের মধ্যে ৪ জন নামের প্রার্থী বলেই জানাচ্ছেন ভোটাররা। বিএনপি প্রার্থী প্রচার-প্রচারনাও চালাননি ঠিকভাবে। নির্বাচনের মুল প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামীলীগের মো: সালাউদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো:নূরুল ইসলাম। নূরুল ইসলাম এরআগেও সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০৩ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত নূরুল ইসলাম যখন চেয়ারম্যান ছিলেন তখন তার পরিষদে ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত সদস্য ছিলেন আওয়ামীলীগ প্রার্থী মো: সালাউদ্দিন। দলগত নির্বাচন হলেও আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নে হিসেব-নিকেষ অন্যরকম। ব্যাক্তি ইমেজও হিসেব করছেন ভোটাররা। এসব হিসেবে বেকায়দায় আওয়ামীলীগ প্রার্থী। সাধারন ভোটার অনেকেই বলেছেন তাদের পছন্দ নূরুল ইসলাম কমান্ডার। এমনকি আওয়ামীলীগের নেতারাও গোপনে সমর্থন করছেন নূরুল ইসলামকে। আওয়ামীলীগ প্রার্থী মো: সালাউদ্দিনের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক আবু নাসের ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি এতোদিন। উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক সফিউল্লাহ মিয়ার সঙ্গে সালাউদ্দিনের বিরোধ রয়েছে। সেকারনে সফিউল্লাহকে তার নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনায় প্রথম দিকে দেখা যায়নি। আলোচনা আছে উপজেলা ও বন্দর আওয়ামীলীগের বেশীরভাগ নেতাই সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে। সবার সঙ্গেই কোন না কারনে বিরোধ রয়েছে তার। যদিও তারা নির্বাচনী সমাবেশ-বৈঠকে জেলার নেতাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ রেখে উপজেলা আওয়ামীলীগের এক নেতা বলেন সালাউদ্দিন আর নূরুল ইসলাম কমান্ডারের চলাফেরায় অনেক পার্থক্য। তাছাড়া সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ অনেক। ঐনেতা বলেন তাকে প্রার্থী হিসেবে চ্নানি আশুগঞ্জের নেতারা। প্রার্থী হিসেবে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই মন থেকে কেউ তার নির্বাচন করছেননা। এমন পরিস্থিতিতে জয় পাওয়ার ভিন্নপথ খুজছে আওয়ামীলীগ। দলের নেতাদের-ভোটারদের সমর্থন না থাকায় সীল মারার ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে দলটিকে। সেরকম প্রস্তুতির আভাস পাওয়া গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া,ভৈরব ও নরসিংদী থেকে সন্ত্রাসী-মাস্তান এনে কেন্দ্র দখল করা হবে বলে আলোচনা রয়েছে। জেলা আওয়ামীলীগের নেতারা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদের জন্যে মরিয়া। অন্যদিকে নূরুল ইসলাম কমান্ডারকে সমর্থন করছেন আশুগঞ্জের দল-বিদলের নেতৃস্থানীয় সবাই। সদর ইউনিয়নে সোহাগপুর গ্রামের মানুষের আধিপত্য বেশী। সোহাগপুর দূগাপুর ইউনিয়নের গ্রাম হলেও এই গ্রামের মানুষ ব্যবসা বানিজ্যের দিক দিয়ে সদরে স্থায়ী। সোহাগপুর গ্রামের মানুষ নির্বাচন করছেন নূরুল ইসলাম কমান্ডারের। চরচারতলার আধিপত্যও রয়েছে সদরে। তাদের সমর্থনও নূরুল ইসলামের দিকে। আশপাশের অন্যান্য ইউনিয়নের মানুষও সমর্থন করছেন নূরুল ইসলামকে। নূরুল ইসলামের সমর্থকরাও বহিরাগত,মাস্তান-সন্ত্রাসীদের কেন্দ্র দখল,জাল ভোট প্রতিহত করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা বলছেন আমরা চাই সুষ্টু ভোট। সুষ্টু ভোটে কেউ বিঘœ ঘটালে আমরাও ছাড় দেবোনা।
সোনারামপুর,যাত্রাপুর,তল্লা ও নাওঘাট গ্রাম নিয়ে এই সদর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের মোট ভোটার ২২ হাজার ৮৮৬ জন। ভোটকেন্দ্র ১০টি। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের ৬জন প্রতিদ্বন্ধি ছাড়াও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১১ ও সাধারণ সদস্য পদে মোট ৪৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
আমিরজাদা চৌধুরী
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
০৩.০৬.১৬