শুক্রবার, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজার প্রতি সংহতি র‌্যালি, জনতার ঢল

news-image

জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকলে ফিলিস্তিনের পক্ষে কার্যকর উদ্যোগ নিতেন ।। দেশের ১৮ কোটি মানুষ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে : গয়েশ^র

ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদ এবং নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজধানীতে বিএনপি আয়োজিত শোভাযাত্রায় জনতার ঢল নামে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন মহানগরেও জনতার ঢল নামে।

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির এই কর্মসূচি বিকাল ৪টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর আড়াইটা থেকেই নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। হাতে প্ল্যাকার্ড, ফিলিস্তিনের পতাকা ও কালো ব্যানার নিয়ে নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করেন পুরো নয়াপল্টন এলাকা। এই র‌্যালিতে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থক ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ আমজনতা অংশ নেয়।

বিকাল পৌনে ৫টার দিকে র‌্যালি শুরু হয়। র‌্যালিটি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে শান্তিনগর, মৌচাক, মগবাজার হয়ে বাংলামোটরে গিয়ে শেষ হয়। পুরো সড়কে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেওয়ার কারণে র‌্যালির সম্মুখভাগ যখন সোনারগাঁও হোটেলের মোড়ে পৌঁছায়, তখনও শেষ ভাগ ছিল নয়াপল্টনেই।

সারাপথেই ছিল ব্যাপক জনসমাগম ও প্রতিবাদী স্লোগান। এই র‌্যালি থেকে ‘তুমি কে আমি কে, ফিলিস্তিনি-ফিলিস্তিনি’, ‘ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করো, দুনিয়ার মুসলিম এক হও লড়াই করো’, ‘ফিলিস্তিনে হামলা কেন, জাতিসংঘ জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়। বিএনপি নেতারা জানান, এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, গণহত্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশি জনগণ ফিলিস্তিনের পাশে আছে। র‌্যালিতে অংশ নেওয়া বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, র‌্যালিতে জনতার ঢল দেখে মনে হয়েছে দেশের সব জনগণ আজ নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।

এই র‌্যালি শুরুর আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। তার আগে গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া এবং আহতদের আশু সুস্থতায় বিশেষ দোয়া করা হয়। র‌্যালিপূর্ব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, অন্য যে কোনো সভার চেয়ে এই প্রতিবাদ মিছিল অস্বাভাবিক বড় হয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসল্লিরাও এতে অংশ নিয়েছেন। ফিলিস্তিনে যা ঘটছে, তা শুধু তাদের ধ্বংস নয়, এটা বিশ্ব মুসলমানদের নিঃশেষ করার একটি ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন মির্জা আব্বাস। মুসলিম বিশ্ব কার্যকরভাবে ঐক্যবদ্ধ হলে ইহুদিরা এতটা সাহস দেখাতে পারত না বলে অভিমত দেন তিনি।

সামাজিক মাধ্যমে ফিলিস্তিনে চলমান সহিংসতার ছবি দেখলে সহ্য করা যায় না বলেও উল্লেখ করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় যেমন জিয়াউর রহমান ভূমিকা রেখেছিলেন, তিনি বেঁচে থাকলে আজ ফিলিস্তিনের পক্ষে কার্যকর উদ্যোগ নিতেন এবং ইসরায়েল এমন সহিংসতা চালানোর সাহস পেত না।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ফিলিস্তিনে যুগের পর যুগ ধরে নৃশংস হত্যাকা- চলছে। নারী-পুরুষ কেউ রেহাই পাচ্ছে না। এটা সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধ। দেশের সাধারণ মানুষ দল-মত নির্বিশেষে ১৮ কোটি মানুষ ফিলিস্তিনের পক্ষে, কিন্তু বুদ্ধিজীবীদের থেকে তেমন কোনো অবস্থান দেখা যাচ্ছে না। জাতিসংঘও নিষ্ক্রিয় একটি ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে গেছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমাদের দেশে একটা সরকার আছে- যে নামে ডাকেন না কেন, সরকারের কাছ থেকে ফিলিস্তিনিদের সম্পর্কে এখনও আওয়াজ পেলাম না কেন?

জাতীয় স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, স্বাধীনতা দিবসে জিয়াউর রহমান ফিলিস্তিনের ইয়াসির আরাফাতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই থেকেই বিএনপি ফিলিস্তিনের জনগণের সংগ্রামের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এসেছে। আজ গাজা যেন অবরুদ্ধ খাঁচা, যেখানে শিশু ও নারীদের ওপর বর্বরতা চালানো হচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার।

ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটকারীদের বিষয়ে হুশিয়ারি দেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, তারা ইসরায়েলের পক্ষে কাজ করছে বলেই মনে করব। তাদের প্রতিহত করতে হবে, তবে কোনোভাবেই মারপিট নয়, পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্বের কয়েকটি পরাশক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনে বহু আগেই ফিলিস্তিনে গণহত্যা শুরু হয়েছে। আজ ফিলিস্তিনের মানুষ নিজেদের দেশেই পরবাসী। অথচ মুসলিম বিশ্বের মোড়লদের কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই। তারা মুখ খুলছে না, অবস্থান নিচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে এই নির্মমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং গণহত্যা বন্ধের জোর দাবি করছি।

সালাহউদ্দিন অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ ইসরায়েলকে পরোক্ষভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং বিরোধী দলের ওপর নিপীড়নের সঙ্গে ইসরায়েলের কাছ থেকে আড়িপাতার যন্ত্র কিনেছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে র‌্যালিপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশ পরিচালনা করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু। আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক প্রমুখ।

এ ছাড়াও র‌্যালিতে উল্লেখযোগ্য বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সহযোগী নেতাদের মধ্যে অংশ নেন- আহমেদ আজম খান, আবদুস সালাম পিন্টু, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, ডা. রফিকুল ইসলাম, শামীমুর রহমান শামীম, মোস্তফিজুর রহমান বাবুল, সাইফুল আলম নিরব, আবদুল মোনায়েম মুন্না, নুরুল ইসলাম নয়ন, এসএম জিলানি, রাজীব আহসান, হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক আহমেদ খান, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহীম, রাকিবুল ইসলাম রাকিব, নাছিরউদ্দীন নাছির প্রমুখ।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ঢাকার বাইরেও নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের পক্ষে যে সংহতি র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানেও জনতার ঢল নেমেছে। পুরো দেশ আজ ফিলিস্তিনি মুসলমানদের পাশে।

 

এ জাতীয় আরও খবর

নো মেকআপ লুকে মিমি চক্রবর্তী

গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের মালিকানা কমল

আদালতে মডেল মেঘনা: সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেই আমার সম্পর্ক, অন্য কারো সঙ্গে নয়

সরকারের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানাল যুক্তরাষ্ট্র

আইএমএফের ঋণের কিস্তির সমঝোতা চলতি মাসেই

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়াতে চায় না ভারত

একাত্তরে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বলল বাংলাদেশ

চট্টগ্রামে দিনভর শিক্ষার্থী-ছাত্রদল ও এনসিপির মধ্যে মারামারি

অভিনয় ও রাজনীতিকে বিদায় জানালেন সোহেল রানা

ঘণ্টায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির আভাস, সতর্কসংকেত

বিশ্বজুড়ে বাড়ছে জলদস্যুতা

বিএনপির চেয়ে বেশি সংস্কার কোন দল করেছে, প্রশ্ন নজরুল ইসলাম খানের