শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘কালোবাজারি’র টিকিট না পেয়ে তুলকালাম, গালাগালের ভিডিও ভাইরাল

news-image

রাজশাহী ব্যুরো : রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট কালোবাজারির কারণে দীর্ঘদিন থেকেই সাধারণ যাত্রীদের কাছে টিকিট পাওয়া যেন সোনার হরিণ। আর হঠাৎ একদিন কালোবাজারির টিকিট না পেয়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ‘অশ্লীল’ ভাষায় গালাগাল করেছেন এক কর্মচারি। এ সময় রেলওয়ের সাবেক এক কর্মকর্তাকেও চরম উত্তেজিত হয়ে স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়।

গত রোববার রাতে টিকিট না পেয়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গিয়ে অশ্লীল গালাগালের সেই ভিডিওটি গতকাল মঙ্গলবার সোশ্যাল মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

অশ্লীল ভাষায় গালাগালকারী রেলওয়ের ওই কর্মচারির নাম বেদব্রত সিনহা। সে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী দপ্তরের উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। আর তার সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজারসহ কর্মকর্তাদের প্রকাশ্যে হুমকি প্রদানকারীর নাম ওয়ালী খান। তিনি রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র ওয়েলফেয়ার ইন্সপেক্টর।

এ ঘটনায় রেলওয়ে জিআরপি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী আব্দুল মোমিন ওই দুইজনের বিরুদ্ধে জিডি করেন।

অভিযোগ উঠেছে, ‘নেশাগ্রস্ত’ অবস্থায় গত রোববার রাতে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে যায় দেবব্রত সিনহা। তার সঙ্গে মহানগর শ্রমিক লীগ নেতা ও সাবেক রেল কর্মকর্তা ওয়ালী খানও যান। তারা এ সময় স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গিয়ে হইচই শুরু করেন। চাহিদামত টিকিট না পাওয়ায় তখন চরম উত্তেজিত হয়ে দেবব্রত সিনহা রেলের দুই কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে ‘অশ্লীল’ ভাষায় গালাগাল করেন। এ সময় ওয়ালী খান টিকিট না পেয়ে জিএমকে উদ্দেশ্য করে হুমকি-ধমকি দেন এবং স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী আব্দুল মোমিনকে তৎক্ষণাৎ স্টেশন মাস্টারের কক্ষে ডেকে নিয়ে আসতে নির্দেশ দেন।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী আব্দুল মোমিন বলেন, ‘দেবব্রত সিনহা রেলের একজন কর্মচারি। কিন্তু তার অত্যাচারে আমরা বুকিং সহকারী অতিষ্ঠ। সাধারণত বুকিং সহকারীদের ডিউটি না থাকলে টিকিট কাউন্টারের অভ্যন্তরে প্রবেশ নিষেধ। অথচ দেবব্রত প্রতিনিয়ত টিকিটের জন্য কাউন্টারের ভেতরে জোরপূর্বক প্রবেশ করে এবং টিকিটের জন্য ধর্ণা দিয়ে আসছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ১৬ জুলাই দেবব্রত এসে ১৭ তারিখের টিকিটের জন্য চাপ দেয়। কিন্তু ১৭ তারিখে তাকে আমি টিকিট দিতে পারিনি। এ জন্য ১৭ জুলাই রাতে দেবব্রত তার কয়েকজন বাহিনী নিয়ে আমাকে খোঁজার জন্য জোরপূর্বক কাউন্টারে প্রবেশ করে কাউন্টার অফিস ঘেরাও করে। ওই দিন টিকিট বিক্রির প্রায় ৬০-৭০ লাখ টাকা কাউন্টার অফিসে ছিলো। যেখানে অন্য কারও কাউন্টারের ভিতরে প্রবেশ নিষেধ সেখানে সে টিকিটের জন্য প্রতিনিয়ত জোরপূর্বক সেখানে ঢুকে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ১৭ জুলাই রাতে আমাকে কাউন্টারের অভ্যন্তরে না পেয়ে কতর্ব্যরত স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গিয়ে আমিসহ রেলের আরও দুই একজন কমকর্তাকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য-অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে। তাই জীবনের নিরাপত্তা ও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জিডি করেছি।’

রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র ওয়েলফেয়ার ইন্সপেক্টর ওয়ালী খান বলেন, ‘যা সত্য তাই বলছি। সবাই টিকিট পায় আর আমরা টিকিট পাই না। কেন আমরা টিকিট পাই না তা জানার জন্যই স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গিয়েছিলাম।’

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত দেবব্রত সিনহা বলেন, ‘আমি ১৪ তারিখে তিনটি টিকিট নিয়েছি মাত্র। আর কখনো টিকিট নেইনি। জমসেদ নামের একজন রেলওয়েতে চাকরি করে না। অথচ তাকে টিকিট দেওয়া হলেও আমাকে দেওয়া হয়নি। এ জন্য আমি জমসেদকে গালাগালি করেছি।

১৫ তারিখে কাউন্টারে প্রবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘টিকিট নিতেই গিয়েছিলাম, কিন্তু টিকিট দেওয়া হয়নি। মূলত রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয় করার জন্য রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান উঠে পড়ে লেগেছে। ওই দিন স্টেশন মাস্টারের কক্ষে যা বলেছি ইচ্ছে করে বলি নাই। তবে এগুলো বলা আমার উচিত হয়নি।’

পশ্চিমাঞ্চল রেলের জিএম অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘কালোবাজারির টিকিট দেওয়া বন্ধ করার কারণেই স্টেশন মাস্টারের কক্ষে গিয়ে ওই কর্মচারি উত্তেজিত হয়ে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল দিয়েছে। আমি ঢাকায় আছি, লিখিত অভিযোগ পেলে ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’