ঈদের আগেই বেগুন-শসা-লেবুর দাম চড়া
নিজস্ব প্রতিবেদক : পবিত্র ঈদুল ফিতর ঘনিয়ে আসায় মানুষ রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে। বাজারে কেনাবেচা কমে গেছে। তার পরও তিন দিনের ব্যবধানে ঈদের আগেই বেগুন, শসার কেজি ও লেবুর হালি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। উচ্চ মূল্যে স্থির হয়ে গেছে চাল, মাংসের দাম। লাল চিনি নির্ধারিত দর (এমআরপি) ১৪০ টাকায় মেলে না। তবে বাড়েনি ছোলা, সয়াবিন তেলের দাম। অন্যদিকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ বাড়লেও খোলা তেলের সংকট কাটেনি।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বিক্রি কমলেও বেগুন শসা লেবুর দাম চড়া
রমজানের শুরুতে বেগুন, শসা, লেবুর দাম সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে যায়। তারপর আর কমেনি। এমনকি ঈদ ঘনিয়ে আসায় মানুষ ঢাকা ছাড়তে শুরু করলেও তিন দিনের ব্যবধানে বেগুন, শসা ও লেবুর দাম বেড়ে গেছে। তিন দিন আগে গোল সবুজ বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও গতকাল ১০০ টাকায় ঠেকেছে। ১০০ থেকে ১২০ টাকার লম্বা বেগুনের কেজি ১৪০ টাকা, ১০০ থেকে ১২০ টাকার বড় লেবুর হালি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা হয়েছে। তবে ছোট লেবুর হালি ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫০ থেকে ৬০ টাকার হাইব্রিড শসা ৯০ থেকে ১০০ টাকা, দেশি জাতের শসাও ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
টাউন হল বাজারের সবজি বিক্রেতা রমজান আলীসহ অন্যরা বলেন, ‘চৈত্র মাস শেষ হতে যাচ্ছে। খেতের সবজি হারিয়ে যাচ্ছে। এ জন্য দাম বাড়ছে। করলা, পটোল, ঢ্যাঁড়শের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকার কমে মিলছে না। ফুলকপি ও বাঁধাকপির দামও বেড়ে ৬০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। টমেটোর দাও বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি হয়েছে।’
বেশি দামেই মাংস বিক্রি
সরকার দাম বেঁধে দিলেও তার ধারে কাছে নেই মুরগির দাম। রমজানের প্রথম দিকে কম দামে বিক্রি হলেও গত সপ্তাহ থেকে মুরগির দাম বেড়ে গেছে। এ ব্যাপারে টাউন হল বাজারের ব্রয়লার হাউসের স্বত্বাধিকারী মো. বেল্লাল হোসেন, কারওয়ান বাজারের আল্লাহর দান ব্রয়লার হাউসের বিক্রয়কর্মী জসিম উদ্দিন ও হাতিরপুল বাজারের ব্রয়লার হাউসের মো. জাকির হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ২১৫ থেকে ২২০ টাকা কেজি বিক্রি করলেও বর্তমানে ২৩০ থেকে ২৩৫ টাকায় ঠেকেছে। সোনালি মুরগির দামও বেড়ে ৩২০ থেকে ৩২৫ টাকা হয়েছে। এর কমে মেলে না। দেশি মুরগিও ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। অন্য বাজারেও একই অবস্থা।’
মুরগির মতো গরুর মাংসের দামও বাড়তি। প্রতি কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। তবে মাংসে উত্তাপ ছড়ালেও ডিমে মিলেছে কিছুটা স্বস্তি। গতকালও বিভিন্ন বাজারে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা ডজন বিক্রি করতে দেখা গেছে। আগের মতোই রুই, কাতলা আকারভেদে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, তেলাপিয়া ও পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৫০, ট্যাংরা ৫০০ থেকে ১ হাজার, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চড়া দামেই মিনিকেট চাল বিক্রি
রমজান মাসে চালের বিক্রি কমলেও দাম চড়া। বিভিন্ন কোম্পানির মিনিকেট চালের দাম ৮৬ থেকে ৮৮ টাকা, সবচেয়ে ভালো মোজাম্মেল মিনিকেট ৯৬ টাকায় ঠেকেছে। তবে আটাশ ও মোটা চালের দাম বাড়েনি। চাল বিক্রেতারা জানান, মিনিকেট চালের দামে ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। রশিদ ৭৮ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হলেও ডায়মন্ড, হরিণ, মনজুর, এরফান ৮৬ থেকে ৯০ টাকায় ঠেকেছে। তবে আগের মতোই আটাশ চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা এবং মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
নিউ মার্কেটের জসিম উদ্দিন, হাতিরপুল বাজারের মাসুমসহ অন্য খুচরা বিক্রেতারা জানান, আগের মতোই ছোলা ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি, ছোলার ডাল ১২০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০, সাদা চিনি ১২০, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা লিটার ও পাম অয়েল ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে খোলা সয়াবিন তেল সহজে মেলে না। দেশি লাল চিনির মোড়কে ১৪০ টাকা লেখা থাকলেও বিক্রেতারা বেশি দামে বিক্রি করছেন।
কৃষি মার্কেটের ফয়সাল জেনারেল স্টোরের মো. ফয়সাল বলেন, ‘লাল চিনি নির্ধারিত ১৪০ টাকা দরে পাওয়া যায় না। বেশি দামে কেনা। তাই একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন মুদি দোকানেও দেখা গেছে একই চিত্র। লাল চিনি নির্ধারিত দরে পাওয়া যাচ্ছে না।