মঙ্গলবার, ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রংপুরে ফলনের সাথে চাহিদা বাড়ছে মজা সুপারির!

news-image

রংপুর ব্যুরো : রংপুর নগরীসহ এ অঞ্চলে মজা সুপারির ফলন বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে চাহিদাও। প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনা, ঝোপঝাড়, পুকুরপাড়, রাস্তার ধার – সব জায়গায় দেখা যায় সুপারি গাছ। একবার লাগালে দীর্ঘদিন ধরে ফল দিয়ে থাকে এ গাছ। আর ব্যবসায়ীরা এ সুপারি কিনে তা মাটিতে পুঁতে রাখেন বা পানিতে ভিজিয়ে রাখেন। পরে পচানো ওই সুপারি বিক্রি করেন প্রায় দেড়গুণ দামে। তাইতো শখ করে তারা এর নামও দিয়েছেন ‘মজা সুপারি’।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রংপুর সদর, মিঠাপুকুর, পীরগাছা, পীরগঞ্জ, তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জসহ কুড়িগ্রাম, রাজারহাট, উলিপুর, ফুলবাড়ি, নীলফামারী ও গাইবান্ধা জেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর সুপারি চাষ হয়। এ গাছের তেমন কোনো যতœ নেয়ার প্রয়োজন হয় না; এর কোনো ডালপালাও থাকে না। সোজা লম্বা হয়ে থাকে। এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় ফলনও বাড়ছে।

এদিকে রংপুর সিটি বাজার, লালবাগ, মিঠাপুকুরের শঠিবাড়ি, পীরগঞ্জ খালাশপীর, কুড়িগ্রামের কাঠালবাড়ি, রাজারহাটসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে সুপারির বাজার।
স্থানীয়রা জানান, মূলত বিয়ে বাড়ি, ভুঁড়িভোজ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান ছাড়াও গ্রামের মানুষের নিত্যদিনের খাবার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে পান-সুপারি। তাছাড়া এ এলাকায় অতিথি আপ্যায়নের পর পান-সুপারি দেয়া একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।

কৃষকরা জানান, চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ – এ তিন মাসে গাছে সুপারি পাকতে শুরু করে। অপরদিকে সুপারি গাছে নতুন করে ফুল ও ফল আসা শুরু হয়। বসতবাড়ির আশপাশে এবং উঁচু জমিতে চারা লাগানোর আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যেই ফল দিতে শুরু করে সুপারির গাছ। বছরে এক-দুবার গোবর সার আর পানির সেচ দেয়া ছাড়া আর তেমন কোনো বাড়তি পরিচর্যা করা লাগে না।ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা অনেকেই বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সুপারি কিনে তা মাটিতে পুঁতে রাখেন বা পানিতে ভিজিয়ে রাখেন। পরে পানিতে পচানো ওই সুপারি শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে বিক্রি করেন প্রায় দেড়গুণ দামে।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পারুল এলাকার ফুল মিয়া জানান, আমার জমির আইল, বাড়ির আশপাশে প্রায় শতাধিক সুপারি গাছ আছে। প্রতি বছরই গাছে প্রচুর পরিমাণে সুপারি ধরে। খাওয়ার জন্য রেখে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দেই। আয় হয় বেশ ভালো। সুপারি গাছ একবার লাগালে ১০-১৫ বছর ফল পাওয়া যায়। চাহিদা ভালো থাকায় সুপারি অধিক লাভে দ্রুত বিক্রি হয়।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ইসা মিয়া ও আমজাদ হোসেন বলেন, তাদের বাড়িতে ৩০ থেকে ৫০টির মতো সুপারি গাছ আছে। এগুলো বাড়ির পাশে লাগানো হয়েছে। প্রতি বছরই প্রচুর পরিমাণে সুপারি পাওয়া যায়। অল্প পরিমাণে নিজেরা বাড়িতে রেখে বাকিগুলো বিক্রি করা হয়।
এব্যাপারে রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান ম-ল জানিয়েছেন, চলতি বছর রংপুর জেলায় মোট ২৫৬ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ১৫৯০ মেট্রিক টন সুপারি। ২০২১ সালে ১৪০০ মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদন হয়েছিল। রংপুরের আবহাওয়া ও মাটি সুপারি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। উৎপাদন বাড়ছে। আশা করি ফলন আরও ভালো হবে।