শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউক্রেনে যুদ্ধে যাওয়া এড়াতে জঙ্গলে পালালেন যে রুশ

news-image

অনলাইন ডেস্ক : গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে রুশ সেনাবাহিনীতে আরও সেনা সমাবেশের এক কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।সেনাবাহিনীতে নিয়োগ এড়াতে সে সময় লাখ লাখ রুশ দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও দেশ ছেড়ে যেতে চাননি অ্যাডাম কালিনিন (ছদ্মনাম)। সে সময় তার মনে হয়, সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগ ঠেকানোর সেরা উপায় হতে পারে একটাই– জঙ্গলে গিয়ে থাকা।

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেই থেকে জঙ্গলে পালিয়ে আছেন কালিনিন। পেশায় কালিনিন একজন আইটি স্পেশালিস্ট বা তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। ইউক্রেন নিয়ে শুরু থেকেই যুদ্ধবিরোধী অবস্থান তার। তিনি যে অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে থাকতেন সেই ভবনের দেয়ালে তিনি সেঁটে দিয়েছিলেন ‘যুদ্ধকে না বলুন’ লেখা পোস্টার, যার জন্য তাকে দুই সপ্তাহের জন্য জেলও খাটতে হয়েছিল, দিতে হয়েছিল জরিমানাও।

কালিনিনের বয়স ৩০-এর কোঠায়। তিনি জানান, তার নিজস্ব যে ছোট জগতের ভেতর থাকতে তিনি আরাম বোধ করেন তা ছেড়ে যাওয়াটা ছিল তার জন্য খুবই কঠিন একটা পদক্ষেপ। তিনি বলেন, ‘আমি যে এ জীবনেও খুব আরামে আছি তা নয়। কিন্তু তার পরও এটা ছেড়ে যাওয়াটা মানসিকভাবে খুবই কঠিন ছিল।’

কালিনিন জানান, তিনটি জিনিসের কারণে রাশিয়া ছাড়তে পারেননি তিনি– বন্ধুবান্ধব, আর্থিক সীমাবদ্ধতা ও পরিচিত জগৎ। তাই তিনি স্ত্রীকে বিদায় জানিয়ে চলে যান জঙ্গলে। সেখানে তাবু খাটিয়ে তিনি থাকছেন প্রায় চার মাস ধরে। সেই জঙ্গলে ইন্টারনেট পেতে তিনি গাছের সঙ্গে একটা অ্যান্টেনা বেঁধেছেন। বিদ্যুতের জন্য লাগিয়েছেন সোলার প্যানেল। কিছুদিন পর পর তার স্ত্রী জঙ্গলে গিয়ে তাকে কিছু খাবার দিয়ে আসেন। সেই বনে তাকে সহ্য করতে হয়েছে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আবহাওয়া। এক এক সময় তাপমাত্রা মাইনাস ১১ ডিগ্রিতে নেমে যেত।

কিন্তু তারপরও সেনাবাহিনীতে নিয়োগ ঠেকানোর জন্য এটাই সবচেয়ে ভালো উপায় ছিল বলে মনে করেন কালিনিন। ‘ওরা যদি শারীরিকভাবে আমার হাত ধরে সেনাবাহিনীতে তালিকাভুক্তির অফিসে নিয়ে যেতে না পারে, তাহলে আপনি ৯৯% নিরাপদ যে আপনাকে মোবিলাইজেশন বা অন্য কোনো রকম হয়রানি করা যাবে না’, বলেন তিনি।

জঙ্গলে আশ্রয় নিলেও কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য কালিনিনের জীবন আগের মতোই আছে। তিনি এখনো সেই একই চাকরি করেন, প্রতি দিন আট ঘণ্টা। তবে শীতের সময় দিন ছোট হয়ে যায় বলে আট ঘণ্টা কাজ করার মত সৌরবিদ্যুৎ পান না তিনি। ফলে শনি ও রোববার কয়েক ঘণ্টা কাজ করে সেই ক্ষতিটা পুষিয়ে দিতে হয়।

তার কিছু সহকর্মী এখন আছেন কাজাখস্তানে। সেনাবাহিনীতে তালিকাভুক্তি শুরু হতেই তারা রাশিয়া ছেড়ে সেখানে চলে গিয়েছিলেন। তবে একটা দূরপাল্লার অ্যান্টেনা পাইন গাছে বেঁধে কালিনিন যে ইন্টারনেট সংযোগ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তা যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য এবং যোগাযোগ তার জন্য তেমন কোনো সমস্যা নয়।

কালিনিন বেড়াতে ভালোবাসেন। রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে ক্যাম্পিং করে তিনি তার স্ত্রীর সঙ্গে অনেকগুলো ছুটির দিন কাটিয়েছেন। জঙ্গলে স্থায়ীভাবে থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তিনি এজন্য প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে রেখেছিলেন।

এই বনবাসী জীবনে তিনি যে টিকে থাকতে পেরেছেন, তার এক বড় কারণ তার স্ত্রীর ভূমিকা। নতুন বছর শুরুর সময় কয়েকদিনের জন্য জঙ্গলের ভেতর কালিনিনের তাঁবুতে এসে থেকেছিলেন তার স্ত্রী। এ ছাড়া তিনি প্রতি তিন সপ্তাহে একবার করে খাবার এবং অন্যান্য সামগ্রী একটা বিশেষ জায়গায় নামিয়ে দিয়ে যান। সেই দিনটায় সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য দুজনের মুখোমুখি দেখা হয়। এরপর কালিনিন তার খাবারগুলো আরেকটি নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যান। রান্নার জন্য তিনি একটি লাকড়ির চুলো বানিয়ে নিয়েছেন।

কালিনিন জানান, ‘আমার কাছে আছে ওট, ময়দা, চা, কফি, চিনি। ফল বা তাজা শাকসবজি বেশি নেই, কিন্তু তার পরও এটা খারাপ নয়।’

রাশিয়াতে বরফের মধ্যে মাছ ধরার সময় যেসব বড় বড় তাবু ব্যবহার করা হয়, সে ধরনের একটি তাবু দিয়েই জঙ্গলে নিজের ঘর বানিয়েছেন কালিনিন।

কালিনিন এখনো সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার ডাক পাননি। তবে পরিস্থিতি প্রতিদিনই বদলাচ্ছে এবং তার আশঙ্কা ভবিষ্যতে কোনো এক সময় হয়তো তার কাছেও ডাক আসতে পারে। রাশিয়ার সরকারি নীতি অনুযায়ী, আইটি কর্মীরা সামরিক বাহিনীতে তালিকভুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধ্যকতা থেকে মুক্ত। কিন্তু রাশিয়াতে এমন অনেক খবর বেরিয়েছে যে অনেক ক্ষেত্রেই এ নিয়ম মানা হচ্ছে না।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সশস্ত্র বাহিনীর জন্য সেনা সমাবেশের কথা ঘোষণা করেছিলেন গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর। তার কিছুদিন আগেই ইউক্রেনীয় বাহিনী খারকিভ অঞ্চলে এক দ্রুতগতির পাল্টা অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা রুশ বাহিনীর দখল থেকে মুক্ত করে।

সে সময় পুতিন বলেছিলেন, পশ্চিমা শক্তির হাত থেকে রাশিয়াকে রক্ষা করার জন্য অতিরিক্ত সেনা সমাবেশ দরকারি হয়ে পড়েছে। কিন্তু রাশিয়ার ভেতরে অনেকেই এর বিরোধিতা করে। সেনাবাহিনীতে তালিকাভুক্তি এড়াতে লাখ লাখ মানুষ সে সময় রাশিয়া ছেড়ে পালাতে থাকে, সীমান্তে তৈরি হয় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি।

 

এ জাতীয় আরও খবর