নিয়োগ পরীক্ষার আগে আরএমওর বাসায় পরীক্ষার্থীরা, ভিডিও ভাইরাল
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির নিয়োগ পরীক্ষাকে ঘিরে প্রশ্নফাঁস ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) পরীক্ষার দিন সকালে শহরের একটি বাসা থেকে একসঙ্গে ২৫-৩০ জন পরীক্ষার্থীর বেরিয়ে যাওয়া এবং আগের রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে ওই বাসায় প্রবেশের ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় এই অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।
ভুক্তভোগী অভিযোগকারীরা দাবি করেছেন, বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) ভোর রাতে কুষ্টিয়া ২৫০ বেড হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মোহাম্মদ হোসেন ইমামের পৈতৃক বাসভবন থেকে ওই সব পরীক্ষার্থীরা বের হন।
তাদের অভিযোগ, পরীক্ষার্থীদের বাসায় এনে উত্তরপত্র মুখস্থ করানো হয় বলে তারা অভিযোগ করেন।
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসে চাকরিরত এক কর্মচারী নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রায় ২৫-৩০ জন পরীক্ষার্থীকে দুটি অ্যাম্বুলেন্স ও সিএনজিতে করে ওই বাসায় আনা হয়। সেখানে তাদের প্রশ্ন দেখানো হয় এবং উত্তরপত্র সরবরাহ করে অনুশীলনমূলক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এসময় স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তারা গণমাধ্যমকর্মীদের খবর দেন। পরে গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে পরীক্ষার্থীরা দিগ্বিদিক ছুটতে থাকেন।
কেউ কেউ দাবি করেন, তারা বন্ধুর বাসায় এসেছিলেন। আবার কেউ কোনো জবাব না দিয়েই পালিয়ে যান। সেসময়ের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেওয়া আব্দুস সালাম বলেন, ‘সীমাহীন নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতির কারণে আমি এই পরীক্ষা থেকে বিরত থাকলাম। আমি জানি যত ভালো পরীক্ষা দেই না কেন আমার চাকরি হবে না। যাদের চাকরি দেওয়া হবে, তাদের কাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি এই পরীক্ষা বাতিলের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
আরেক পরীক্ষার্থীর স্বামী মো. মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ভিডিওতে দেখলাম, ভোররাতে শিক্ষার্থীরা অ্যাম্বুলেন্সে করে আরএমওর বাসায় ঢুকছেন ও বেরোচ্ছেন। শুনেছি এই চাকরির জন্য ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। ভেবেছিলাম নতুন সরকারের আমলে দুর্নীতি কমবে কিন্তু বাস্তবে তা আরও বেড়েছে।’
এ বিষয়ে খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ও নিয়োগ পরীক্ষার কমিটির সভাপতি ডা. মজিবুর রহমান বলেন, ‘নিয়োগ পরীক্ষা সম্পূর্ণরূপে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, বিতরণ ও উত্তরপত্র সংগ্রহে কোনো দুর্বলতা ছিল না। যদি কেউ বাইরে থেকে অনৈতিকভাবে সুবিধা নিতে চায়, তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে। আমরা চাই মেধার ভিত্তিতেই প্রার্থী নির্বাচন হোক।’
অভিযোগ অস্বীকার করে আরএমও ডা. মোহাম্মদ হোসেন ইমাম বলেন, ‘ভোররাতের ঘটনা আমি কিছুই জানি না। আমার পৈতৃক বাড়িতে আমি, আমার ভাই ছাড়াও তিনটি ফ্লোরে মেস রয়েছে। পরীক্ষার্থীরা ওই মেসেই এসেছিলেন। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে তারা কেন পালিয়েছেন, সেটাও আমার অজানা।’
চাকরি প্রত্যাশী পরীক্ষার্থীরা ওই মেসেই কেন এসেছিলেন, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এদিকে এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।











