শুক্রবার, ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘জনগণকে সত্য ভুলিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে’

news-image

নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকার জনগণকে সত্য ভুলিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপির স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপন স্বরচিত কবিতা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা কমিটির উদ্যোগে চিত্রাঙ্কন ও কুইজ প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে তিনি এ অভিযোগ করেন। এতে অর্ধশতাধিক শিশু-কিশোর অংশ নেয়।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বাংলাদেশে যিনি প্রথম বলেছিলেন, উই রিভোল্ড, আমরা বিদ্রোহ করলাম। সেই মানুষটার নাম মেজর জিয়াউর রহমান এবং সেখান থেকে তিনি তার ইউনিটে ফিরে যান, তার কামন্ডার একজন পাঞ্জাবি অফিসার তাকে বন্দি করেন, হত্যা করেন। এবং তার কণ্ঠেই প্রথম আমরা স্বাধীনতার ঘোষণা শুনেছি রেডিওতে।’

তিনি বলেন, ‘কেউ এখন আইন করে কিংবা কোনো আদালত রায় দিয়ে যদি আমাকে বলে যে, তুমি নিজের কানে যা শুনেছো সেটা বিশ্বাস করো না। আমি কি করে তা মানব? আমি তো কারও কাছ থেকে শোনা কথা বলছি না। আমি আমার নিজের কানে শোনা কথা বিশ্বাস করব না? কিন্তু আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাসের সত্য ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আমি বলব, অপচেষ্টা হচ্ছে। দেশকে এই ধরনের অপরাধ থেকে মুক্ত করতে হবে। যার যা প্রাপ্য সেটা তাকে দিতে হবে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা যে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম সেটা একদিনের প্রস্তুতি না। আমাদের মহান মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে অনেক সংগ্রাম-আন্দোলনে মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতার সংগ্রামে পৌঁছেছি, স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছি। এই সময়গুলোতে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা সবাই আমাদের শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য এবং শেষ পর্যন্ত ১৯৭০ এর নির্বাচনে যারা বিজয়ী হয়েছিলেন এবং গণতন্ত্রের স্বাভাবিক নিয়মে যাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার কথা তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি বলেই তো আমাদেরকে যুদ্ধ করতে হয়েছিল। গণতন্ত্রের জন্য, গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা পুরণের জন্য সে সময়ে যারা রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদেরকেও আমাদের শ্রদ্ধা করতে হবে, তারাও শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য।’

‘কারণ সেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি ক্ষেত্র প্রস্তুত না করতো তাহলে তো যুদ্ধে করে আমরা জনগণের সমর্থন পেয়ে বিজয়ী হতে পারতাম না। সেই সময়ে সারা দুনিয়ার যারাই আমাদের সহযোগিতা করেছে, সমর্থন জানিয়েছে তারা সবাই আমাদের শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য। সেই সময়ে আমাদের দেশে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে, এমনকি যারা কিছু করতে পারেন নাই আমাদের জন্য দোয়া করেছেন তাদের কাছেও আমাদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে হবে। কিন্তু কাউকে কোনো মর্যাদা না দিয়ে, কারেও প্রতি কোনো কৃতজ্ঞতাবোধ না জানিয়ে শুধুই যদি আমরা কেউ নিজেরা এই গৌরবকে দখল করতে চাই এটা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না, এটা অন্যায়’, যোগ করেন নজরুল ইসলাম খান।

শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তোমরা সত্য জানার চেষ্টা করো। মনে রাখবে জ্ঞান তাই যা সত্য। মিথ্যা জানা জ্ঞান নয়। যারা মিথ্যা জানাতে চায় তারা আমাদেরকে অজ্ঞানতার অভিশাপে আবদ্ধ করতে চায়। কাজেই সত্য জানার আবেগ ও উৎসাহ আরও জাগ্রত হোক।’

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা ব্যক্তিদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক জিয়াউর রহমানের সহধর্মিনী বেগম খালেদা জিয়াসহ তার দুই সন্তান পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কারাগারের মাসের পর মাস কাটাতে হয়েছে। তারা মুক্তিযোদ্ধা। তাদের প্রতিও আমাদের শ্রদ্ধা। কিন্তু কি দুর্ভাগ্য আমাদের, যিনি ৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর কারাগারে দুই সন্তানসহ বন্দিজীবন কাটিয়েছেন আজকে আবার এই সরকারের আমলে মিথ্যা অভিযোগ কারারুদ্ধ হয়ে থাকতে হচ্ছে দারুণ অসুস্থ অবস্থায়।’

প্রতিযোগিতা কমিটির আহবায়ক সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কবি আবদুল হাই শিকদারের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্বনির্ভর বিষযক সম্পাদক শিরিন সুলতানা বক্তব্য রাখেন। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- মীর নেওয়াজ আলী, সেলিম রেজা হাবিব, মেজবাহ আহমেদ, আবদুল বারী ড্যানি, আমিনুল ইসলাম, আবেদ রাজা, খান রবিউল ইসলাম রবি, ফরিদা ইয়াসমীন, মহসিন মন্টু, শাহজাহান মিয়া সম্রাট, রীতা আলী প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।