শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রংপুরে দিন দিন বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ

news-image

হারুন উর রশিদ সোহেল,রংপুর : রংপুর মহানগরীসহ জেলার আট উপজেলা দিন দিন বেড়েই চলছে বিবাহবিচ্ছেদের পরিসংখ্যান। বিষয়টি নতুন না হলেও করোনাকালে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পূর্বের চেয়ে বিচ্ছেদের হার বেড়েছে অনেক বেশি। প্রতি মাসে দেড় শতাধিকের বেশি বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনপত্র জমা পড়ছে। মাসে গড়ে ৭০ থেকে ৮০টি বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে।

জানা গেছে, গত এক বছরে রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় সহস্রাধিক বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। মহানগরীর বাইরে জেলার বাকি আট উপজেলাতেও হরহামেশাই ঘটছে এ রকম ঘটনা। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে বিচ্ছেদের এ তকমায় এগিয়ে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা। রয়েছে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্যরাও। যাদের গড় বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছর।
রসিকের সাধারণ শাখার উচ্চমান সহকারী নাইমুর হক নাইম জানান, গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি জুন পর্যন্ত মহানগরীর ৩৩ ওয়ার্ডে ৯৬০টিরও বেশি বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। তালাক দেওয়ার তালিকায় নারীরা একধাপ এগিয়ে রয়েছেন। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে নারীরা এখন অনেক বেশি হারে তালাক দিচ্ছেন ।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর সিটির বর্ধিত এলাকা ছাড়াও শহরের কমবেশি শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরিব, শ্রমজীবী-চাকরিজীবীসহ যেকোনো পেশার মানুষ পারিবারিক অশান্তি, বিরোধ-কলহের জেরে সাংসারিক সম্পর্কের সমাপ্তি টানছেন।বিচ্ছেদের এই তালিকায় যৌতুক নিয়ে বিরোধ, পরিবারের অনুমতি ছাড়া বিয়ে, পালিয়ে বা প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে বিয়ে, কারো প্ররোচনায় পড়ে বিয়ে এবং অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে করা ছেলে-মেয়েরা রয়েছে। যাদের বেশিরভাগই উঠতি বয়সের এবং স্কুল-কলেজ পড়ুয়া। এছাড়াও বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ রয়েছেন।

নগরীর তামপাট এলাকার এক নারী জানান, পরিবারের মতে প্রায় ৬ বছর আগে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর ভালোই চলছিল কিছুদিন। তাদের একটি ছেলে রয়েছে। বর্তমানে পরিবারে প্রতিনিয়ই অশান্তি বিরাজ করছে। তাই বাধ্য হয়েই গত ৪ মাস ধরে বাবার বাড়িতে আছি। স্বামীর বাড়িতে আর যাওয়ার ইচ্ছা নেই।

নগরীর কামারপাড়া এলাকার এক চাকরিজীবী পুরুষ। কয়েক মাস আগে তার স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে অন্যত্রে আবার বিয়ে করেছেন। এই ব্যক্তি নিজের নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, তার স্ত্রী যৌথপরিবারে থাকতে রাজি ছিলেন না। দুজনের মধ্যে অনেক মতপার্থক্য ছিল। তারপরও চেষ্টা করেছেন সংসার টিকে রাখার। কিন্তু স্ত্রীর অবাধ চলাফেরা, চিন্তাধারায় ভিন্নতা এবং আলাদা থাকার প্রবল ইচ্ছার কারণে সংসারে অশান্তি লেগে ছিল। শেষ পর্যন্ত মানিয়ে নিতে না পেরে বাধ্য হয়ে বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়।

রংপুরের আদি শহর মাহিগঞ্জ এলাকার বিচ্ছেদ হওয়া এক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নিম্নআয়ের পরিবার আমার। অভাবের কারণে পড়ালেখাও তেমন করা হয়নি। অল্প বয়সে বিয়ে দিয়েছিল পরিবার। বিয়ের সময়ে ছেলের পক্ষ থেকে চার লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেছিল। আমার বাবা দেড় লাখ টাকা যৌতুক দিয়ে আমাকে বিয়ে দেন। কিন্তু বাকি টাকার জন্য সবসময়ই খটকা দিত শ্বশুরবাড়ির লোকজন। যৌতুকের টাকা না দিতে পারায় স্বামী আমাকে মারধর করত। বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে তালাক দিতে বাধ্য হয়েছি।

গঙ্গাচড়ার তালুক হাবু এলাকার এক কৃষকের মেয়ে জানুয়ারির দিকে তার প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করেন। কিন্তু ৩ মাস পার না হতেই সংসার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। দুজনের অপ্রাপ্তবয়স আর দাম্পত্য জীবনে ভুল বোঝাবুঝি থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পর্কটা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।ওই তরুনী নাম না প্রকাশের অনুরোধে বলেন, স্বামী নেশা করত এবং বেকার ছিল। প্রেমের সম্পর্ক ধরে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু বিয়ের পর থেকে ভিন্ন আচরণ শুরু করে। নেশার টাকার জন্য আমাকে নির্যাতন করত। টাকার জন্য কিছুদিন পর পর বাবার বাসায় পাঠিয়ে দিত। এ রকম অত্যাচার সহ্য করেও সংসার টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর সম্ভব হয়নি।

এদিকে রংপুর মহানগর কাজী সমিতির সভাপতি হাফিজ মুহাম্মদ আব্দুল কাদির বলেন, বিবাহবিচ্ছেদ বেড়ে যাওয়ার জন্য পারিবারিক অশান্তি, পরকীয়া এবং নারী নির্যাতনকে দুষছেন তিনি। এছাড়াও তিনি বলেন, অবাধ স্বাধীনতা, ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব, মাদকাসক্ত, পরকীয়া আসক্তি, স্বামী-স্ত্রীর মতামতের পার্থক্য, যৌতুক, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন কারণে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে।

কাজী সমিতির এই নেতা আরও জানান, বিবাহ বিচ্ছেদের সবকিছুর মূলে যৌতুক, পরকীয়া, শারীরিক নির্যাতন, অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হওয়া। সঙ্গে ভারতীয় টিভির সিরিয়ালও সংসার জীবনে বিচ্ছেদের ঘটনায় নারী-পুরুষদের প্রভাবিত করছেন বলে দাবি তার। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বিচ্ছেদের প্রবণতা বেড়েছে। এতে পুরষদের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি।

এব্যাপারে কথা হয় রংপুর জজ কোর্টের আইনজীবী মাহমুদুল ইসলাম রানা’র সাথে। তিনি বলেন, সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে দিন দিন বিবাহবিচ্ছেদ বাড়ছে। তবে এটি বেদনাদায়ক। এই চর্চার ব্যাপকতা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে এটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হবে।

এ জাতীয় আরও খবর

পাবনায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু

ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি, জানাল তেহরান

ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৪৩৮ জন

নব্য বাকশাল কায়েম করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল

যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৬ ডিগ্রি

নিবন্ধনহীন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করা হবে : তথ্য প্রতিমন্ত্রী

আ.লীগের সব পর্যায়ের কমিটি গঠন ও সম্মেলন বন্ধ : কাদের

৪২ ডিগ্রি ছাড়াল চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা, গলে যাচ্ছে রাস্তার পিচ

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে ৪২.৬ ডিগ্রি, ঢাকায় ৪০ পার

তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৫ দিন বন্ধ ঘোষণা

শিল্পী সমিতির নির্বাচন : সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক ডিপজল নির্বাচিত

তাপপ্রবাহ : প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি না করানোর নির্দেশ