রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অথচ তিনি তখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন: ফখরুল

news-image

নিজস্ব প্রতিবেদক : মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আওয়ামী লীগের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের কর্মকাণ্ডে মনে হয় ‘একজন ব্যক্তি’ ছাড়া কেউ মুক্তিযুদ্ধ করেননি, অথচ তিনি তখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন।

বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানি বাহিনী। বন্দী হওয়ার আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান বঙ্গবন্ধু। পরে মুক্তিযুদ্ধকালীন যে সরকার গঠিত হয়েছিল, সেখানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি করা হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানকে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পরে লন্ডন হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন দেশে পা রেখেছিলেন তিনি।

শুক্রবার রাতে ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান বীরশ্রেষ্ঠর দেহাবশেষ পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভূমিকা’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একাত্তরের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন জাতীয় কমিটি এ সভার আয়োজন করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এদের (আওয়ামী লীগ) ঘটনাবলি দেখলে মনে হয়, এ দেশে কোনো মুক্তিযুদ্ধ কেউ করেনি একমাত্র একজন ব্যক্তি ছাড়া। অথচ তিনি সেই দিন দেশেই ছিলেন না, পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন। আওয়ামী লীগ আজকে একবারের জন্যও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীর নাম উচ্চারণ করে না, সেই সময়ে প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের অবদানের কথা বলেন না, লাখ লাখ সাধারণ মুক্তিযোদ্ধার কথা তাঁরা উচ্চারণ করেন না। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে খলনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিকৃত ইতিহাসের ক্যাম্পেইন শুরু করেছে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকার ‘পাকিস্তানি বাহিনীর মতোই জনগণের অধিকারগুলো খর্ব করছে’। তিনি বলেন, বর্তমানে যারা ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, তারা স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য মানুষের ওপর অত্যাচার-জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, বিএনপি সব সময় স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, রণাঙ্গনে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদের সংগঠিত দল। যে আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এ দেশের মানুষ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিল, সেই গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিএনপি সংগ্রাম করছে। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন এবং গণতন্ত্র মুক্তি পাবে।’

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে যেসব অনুষ্ঠান করা হচ্ছে এটার লক্ষ্যই হচ্ছে প্রকৃত ইতিহাসগুলো সামনে তুলে নিয়ে আসা। এটা কারও প্রতি বিরাগ নয়, কাউকে ছোট করা নয়, বরং যার যে সম্মান সেই সম্মানগুলো তাদের দেওয়ার জন্য।

আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের কবর পাকিস্তানে ছিল। বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তাঁর কবরের দেহাবশেষ ঢাকায় ফিরিয়ে এনে শহীদ ‍বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পুনরায় সমাহিত করা হয়। এই কাজটি বেগম খালেদা জিয়া সফলভাবে করতে পেরেছিলেন বলে আজকে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানকে দেশের মানুষ শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে গিয়ে সম্মান জানাতে পারে।’

আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন কমিটির সদস্যসচিব আবদুস সালাম বক্তব্য দেন।