ভাগ্নিকে ধর্ষণ-বিয়ে অতঃপর গর্ভপাত!
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : বড়লেখায় দুই সন্তানের জনক লম্পট মামা আলী আছকর (৩৫) দা দেখিয়ে ষোড়শী ভাগ্নিকে দুই দফা ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে গত ১ মার্চ স্থানীয় ইউপি মেম্বার ফখরুল ইসলামের উপস্থিতিতে গ্রাম্য মাতবররা দেড় লাখ টাকা দেনমোহরে কাজীর (নিকাহ রেজিস্ট্রার) সহকারী আব্দুল হামিদকে দিয়ে অভিযুক্ত মামার সঙ্গে ভুক্তভোগী ভাগ্নির বিয়ে পড়িয়ে দেয়। বিয়ের রাতেই আলী আজগরের প্রথম স্ত্রী ও বোন জোরপূর্বক ওষুধ খাইয়ে ভুক্তভোগীর গর্ভপাত ঘটিয়েছে। ঘটনার পরদিন থেকেই অভিযুক্ত আলী আছকরের খোঁজ মিলছে না। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা শুক্রবার সন্ধ্যায় মামা আলী আছকর, স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার, বিয়ে পড়ানো কাজীর সহকারীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
জানা গেছে, উপজেলার বিওসি কেছরীগুল গ্রামের দুই সন্তানের জনক আলী আছকর একই গ্রামের চাচাতো বোনের বাড়িতে যাতায়াত করতো। প্রায় ৪ মাস পূর্বে দিনের বেলা সে বাবা-মায়ের অনুপস্থিতে ঘরে ঢুকে ষোড়শী ভাগ্নিকে দা দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে একই কায়দা আরেকদিন তাকে ধর্ষণ করে। এতে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রাম্য সরদারদের ম্যানেজ করে লম্পট মামা ঘটনা ধামাচাপা দিতে ক্লিনিকে নিয়ে গর্ভপাত ঘটাতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে গত ১ মার্চ রাতে গ্রামের আব্দুল আজিজের বাড়িতে স্থানীয় ইউপি মেম্বার ফখরুল ইসলাম, মাতবর রজব আলী, বাদল আহমদ প্রমুখ পাখিয়ালা এলাকার নিকাহ রেজিস্ট্রার জিয়াউল হকের সহকারী আব্দুল হামিদকে দিয়ে দেড় লাখ টাকা দেনমোহরে উভয়ের বিয়ে দেন। সেদিন রাতেই আলী আছকরের প্রথম স্ত্রী ও বোন ধর্ষিতাকে নিয়ে যায়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী জানায়, দুঃসম্পর্কের মামা আলী আছকর ঘরে ঢুকে দা দেখিয়ে দু’দিন তাকে ধর্ষণ করে। তার স্ত্রীকে ঘটনা জানালে কাউকে না বলতে ভয় দেখায়। একপর্যায়ে বাবা-মাও জেনে যান। আলী আছকর কয়েকবার ক্লিনিকে নিয়ে গর্ভপাতের চেষ্টা চালায়। ওয়ার্ড মেম্বার ও গ্রামের মাতবরদের নিকট বাবা-মাসহ আমি বিচারপ্রার্থী হই। মাতবররা ১ মার্চ গ্রামের আব্দুল আজিজের বাড়িতে কাজী ডেকে দেড় লাখ টাকা দেনমোহর ধার্যক্রমে আলী আছকরের সঙ্গে আমার বিয়ে দেন। ওই রাতেই আলী আছকর, তার স্ত্রী দিলারা বেগম ও বোন আমাকে আলাদা এক বাড়িতে নিয়ে যায়। তারা জোরপূর্বক ওষুধ সেবন করে গর্ভপাত ঘটিয়েছে। পরের দিন বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। গত ১০ দিনেও আলী আছকরকে খুঁজে পাইনি। ইউপি মেম্বার ও মাতবররা বিয়ের কাবিন, মোহরানা কোন কিছুই দিচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে আলী আছকর, তার স্ত্রী দিলারা বেগম, ইউপি মেম্বার, বিয়ে পাড়ানো কাজীসহ ৭ জনের আমার বাবা থানায় মামলা করেছেন।
কাজীর সহকারী আব্দুল হামিদ জানান, ইউপি মেম্বার ফখরুল ইসলাম ও মাতবর রজব আলী টেলিফোন করে তাকে আব্দুল আজিজের বাড়িতে নেন। আলী আছকরের সাথে ওই মেয়ের বিয়ে পড়িয়ে দিতে বললে তিনি সামাজিকভাবে বিয়ে পড়িয়ে দেন। বয়স কম হওয়ায় বিয়ে রেজিস্ট্রি (কাবিন) করেননি।
ইউপি মেম্বার ফখরুল ইসলাম ভুক্তভোগীর সঙ্গে অভিযুক্ত ধর্ষকের বিয়ের বৈঠকে উপস্থিত থাকার ও কাজীর সহকারীকে ফোনে ডেকে আনার সত্যতা স্বীকার করেন। তবে তিনি দাবি করেন, অপ্রাপ্ত বয়স্কের সঙ্গে এভাবে বিয়ে পড়িয়ে দেয়া ঠিক নয় বললেও গ্রাম্য মাতবররা তার কথা শুনেননি।
থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান, এক ভুক্তভোগীর বাবা শুক্রবার সন্ধ্যায় অভিযুক্ত ধর্ষক ও স্থানীয় ইউপি মেম্বারসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
