শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাবনায় প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ কর্মীকে গুলি করে হত্যা

news-image

পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার ভাঁড়ারায় আওয়ামী লীগ কর্মীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার বিচার দাবিতে নিহতের মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ করেছে স্বজন ও এলাকাবাসী। রবিবার রাতে ভাঁড়ারা ইউপির আতাইকান্দা এলাকায় হত্যার পর মরদেহ উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। সোমবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনের নিকট হস্তান্তরের পর মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।

পরে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে পথসভায় হত্যার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাইদ খানকে দায়ী করে তার গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।

পুলিশ জানায়, রবিবার রাতে পাবনার ভাঁড়ারা ইউপির আতাইকান্দা গ্রামে গুলিতে হত্যা করা হয় কাথুলিয়া গ্রামের মন্তাই ব্যাপারীর ছেলে আওয়ামী লীগ কর্মী আমিরুল ইসলামকে (৩০)। প্রকাশ্যে হত্যার পর হত্যাকারীরা নির্বিঘ্নে চলে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধারের পর পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়।

স্থানীয় প্রভাবশালীদের পূর্বশত্রুতার জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন পুলিশ।

হত্যার কারণ ও জড়িতদের খুঁজে বের করতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানায় তারা।

তবে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভাঁড়ারা ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ খাঁন ও সুলতান খাঁনের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। সন্ধ্যার পরে এলাকার মুজিব বাঁধ সংলগ্ন আতাইকান্দা ভাউডাঙ্গা মোড়ে চা খেতে এসেছিলেন আমিরুল। এ সময় আগে থেকেই ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা আমিরুলকে চায়ের দোকানে বসে থাকা অবস্থায় প্রকাশ্যে গুলিতে হত্যা করে । আমিরুল ইসলাম পূর্বে সর্বহারা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও বর্তমানে কৃষি ও রাজমিস্ত্রীর কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন।

তিনি এলাকায় সুলতান খানের সমর্থক ছিলেন বলে জানান স্থানীয়রা।

ঘটনায় পরে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়।

জানা যায়, এক সময়ের চরমপন্থী অধ্যুষিত পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাইদ খান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান খাঁ গ্রুপে বিভক্ত। আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে উভয়পক্ষে প্রায়ই সংঘর্ষ হয়। ঘটেছে একাধিক হত্যা, বাড়িঘর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা।

নিহত আমিরুল সুলতান খানের সমর্থক ছিলেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

হত্যার প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে আমিরুলের মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। চেয়ারম্যান আবু সাইদের নির্দেশে তার ভাই রফিক আমিরুলকে হত্যা করেছে দাবি করে তাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান বিক্ষুব্ধরা।

তারা বলেন, কেবল আমিরুল নয়, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান খানের বাবা লস্কর খানসহ কয়েক বছরে কমপক্ষে ১২টি হত্যাকাণ্ড চেয়ারম্যান সাইদের নির্দেশে ঘটলেও, কোনো হত্যারই বিচার হয়নি।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান খান জানান, ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাইদ খানের অবৈধ বালি উত্তোলন, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় হত্যা করা হয়েছে আমিরুলকে। গত ইউপি নির্বাচনে সাইদের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করায় আমার বৃদ্ধ বাবা ও চাচাকেও গুলি করে হত্যা করেছে সাইদ ও তার গুন্ডা বাহিনী। অবৈধ টাকার দাপটে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কোনো হত্যারই সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হতে দেয়নি তারা। আজ আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।

নিহত আমিরুলের বাবা মন্তাই ব্যপারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে কাঠমিস্ত্রির কাজ করত। তাকে অকারণে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি হত্যাকারীদের বিচার চাই।

তবে হত্যায় যুক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে সুলতান খাঁকেই মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী বলে দাবি করেন অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাইদ খান।

তিনি বলেন, সুলতান খাঁ স্বপরিবারে মাদক ব্যবসা করেন, দোগাছি ইউপি চেয়ারম্যান আলী হাসান, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুল আহাদ বাবু ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ রাসেল আলী মাসুদের সঙ্গে পদ্মা নদীর বালিমহালের নিয়ন্ত্রণ নিতে চান। রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির ষড়যন্ত্রে নিজেরাই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে আমাকে দোষারোপ করছে তারা।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, আমিরুল হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশ। পাবনা সদর থানায় হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন। আসামিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।