শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জানাযায় মানুষের ঢল, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের দাফন সম্পন্ন

news-image

ফরিদপুর প্রতিনিধি : হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ফরিদপুর শহরের রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে জানাযা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের। প্রিয় মানুষদের শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় সিক্ত হয়ে কমলাপুরস্থ ময়েজমঞ্জিলে তার বাবা চৌধুরী ইউসুফ আলী মোহন মিয়ার কবরের পাশে চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফকে কবরস্থ করা হয়।

শুক্রবার বাদ জুমা দুপুর সোয়া দুইটার দিকে রাজেন্দ্র কলেজ ময়দানে একটি লাশবাহী গাড়িতে করে ময়েজমঞ্জিল থেকে চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মরদেহ আনা হয়। এসময় সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। জানাযায় অংশ নিতে ফরিদপুর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ছুটে আসেন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শহরের চকবাজার জামে মসজিদের খতিব ও সামমুল উলুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি মাওলানা কামরুজ্জামানের ইমামতিতে জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। প্রিয় নেতার দাফন কার্যে অংশ নিতে আগত জনতার পদচারণায় এসময় সেখানে তিল ধারণের ঠাই ছিল না। রাজেন্দ্র কলেজ মাঠ ছাড়িয়ে এসময় পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর শেখ জামাল স্টেডিয়াম পর্যন্ত ছিল মুসল্লীদের ভিড়।

জানাযাপূর্ব সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন মরহুমের মেয়ে চৌধুরী নায়াব ইউসুফ, এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদ, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, শরিয়তপুরের বাহাদুরপুর দরবার শরীফের প্রতিনিধি হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ হানজেলা, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকু, ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সৈয়দ মোদাররেস আলী ঈসা প্রমুখ। এছাড়া এসময় ফরিদপুর মুসলিম মিশনের সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সামাদের পক্ষ হতে একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান শেখ ফরিদ জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

বক্তাগণ সাবেক এই জনপ্রিয় রাজনীতিবীদ ও সংসদ সদস্য চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, তিনি ছিলেন প্রকৃতই একজন সজ্জন চরিত্রের জননেতা। তার প্রতিপক্ষ বা রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধেও তিনি কখনো প্রতিহিংসার রাজনীতি করতেন না। তিনি পাঁচবার ফরিদপুর সদর আসন তেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপি যতবার সরকার গঠন করেছে ততবারই তিনি মন্ত্রী হয়েছেন।

চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মেয়ে চৌধুরী নায়াব ইবনে ইউসুফ জানাযাপূর্ব তার আবেগঘণ ও কান্নাজড়িত বক্তব্যে তার বাবার জন্য সকলের কাছে দোয়া চান। তিনি বলেন, আমার বাবা ও পূর্ব পুরুষেরা যেভাবে আপনাদের সুখে-দুঃখে আপনাদের পাশে থেকেছেন, ইনশাআল্লাহ আগামীতেও আমি সেভাবে আপনাদের পাশে থাকার চেষ্টা করবো।

জানাযার পর রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। এসময় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে ছাড়াও জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে মোদাররেস আলী ঈসা, জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন, নবনির্বাচিত পৌর মেয়র অমিতাভ বোস, কোতয়ালী থানা বিএনপি, শহর বিএনপি, রাজবাড়ি ও মাদারিপুর জেলা বিএনপি, জেলা যুবদল, মহানগর যুবদল, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল, জেলা তাতী দল, জেলা ছাত্রদল, মহানগর ছাত্রদল, ফরিদপুর প্রেসক্লাব, চকবাজার বণিক সমিতিসত বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুস্পমাল্য অর্পণ করা হয়।

জানাযা শেষে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে রাজেন্দ্র কলেজ ময়দান হতে তার মরদেহ ময়েজমঞ্জিলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তাকে দাফন করা হয় বাবা চৌধুরী ইউসুফ আলী চৌধুরী মোহন মিয়ার কবরের পাশে।

প্রসঙ্গত, গত ৮ অক্টোবর ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। এর আগে গত ১৯ নভেম্বর নিউমিয়াজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর এক সপ্তাহ সিসিইউতে লাইফ সাপোর্ট থাকার পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও চার মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুর খবরে ফরিদপুরে শোকের ছায়া নেমে আসে।