বুধবার, ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খাল খননে বাধা দিয়ে প্রকৌশলীদের মারধর, আ’লীগ নেতা গ্রেপ্তার

news-image

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি : নালিতাবাড়ীতে এলজিইডির ক্ষুদ্রাকার সেচ প্রকল্পের একটি খাল পুনঃখনন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সহকারী প্রকৌশলী ও উপসহকারী প্রকৌশলীসহ চারজনকে মারধর করা হয়েছে। এ ঘটনায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে কাকরকান্দি ইউনিয়নের সুতিয়ারপাড় বাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চলতি বোরো মৌসুমে খাল খনন করলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন– এমন দাবিতে স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে খাল খনন বন্ধে আন্দোলন করা হয়। তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্তৃপক্ষের দাবি, মূলত চাঁদা না পেয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে।

সম্প্রতি এলজিইডির ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প-২ এর অধীনে সুতিয়ার খাল পুনঃখননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। খননের আওতায় রয়েছে রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের ফুলপুর বান্দের বাজার থেকে কাকরকান্দি ইউনিয়নের রসাইতলা কাঁকরামারি পর্যন্ত ১০ দশমিক ৭ কিলোমিটার খাল। ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকার খনন কাজটি সুতিয়ার খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়ন করার কথা। কিন্তু কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় এডহক কমিটি সঙ্গে নিয়ে বাস্তবায়নে নামে কর্তৃপক্ষ। গত সপ্তাহে খালটি পুনঃখনন করতে গেলে কাকরকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল কৃষক বাধা দেন। পরে বৃহস্পতিবার রসাইতলা গ্রামের শাখা খালটি পুনঃখনন করতে দুটি এক্সক্যাভেটর নিয়ে কাজ শুরু করে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। দুপুরের দিকে আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুলের নেতৃত্বে একদল কৃষক খনন কাজ বন্ধ করে দেন। এ সময় এলজিইডি শেরপুর কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী হাসানুর রহমান, উপসহকারী প্রকৌশলী গৌতম বিশ্বাস ও কাজি মঈন উদ্দিন এবং নালিতাবাড়ী কার্যালয়ের জেনারেল ফ্যাসিলিটেটর মেহেদী হাসানকে মারধর করে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম ও রাকিবুল হাসান বুলবুলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেন সহকারী প্রকৌশলী হাসানুর রহমান। শুক্রবার বিকেলে অভিযুক্ত আমিনুল আসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে শহরে বিক্ষোভ করেছে তার অনুসারীরা।

রসাইতলা গ্রামের কৃষক সেকান্দর আলী বলেন, ‘খালটি মরা। এটি খনন করা হলে খালে পানি জমবে আর সে পানি থেকে সেচ দিয়ে বোরো আবাদ করতে পারব।’ কৃষক শাহ আলম বলেন, ‘আমাদের কোনো সমস্যা হয় না, তাহলে অন্য এলাকার কৃষকরা কেন এখানে এসে খনন কাজ বন্ধ করে দেয়? খালটি পুনঃখননের দাবি করছি।’

কতিপয় ব্যক্তির চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পলাশিয়া গ্রামের কৃষক সোহরাব আলী। তার ভাষ্য, বোরো আবাদ চলমান। এ সময় খনন কাজ করা হলে খালটি একেবারে শুকিয়ে যাবে। তখন সেচ দিতে পারবেন না তারা। এতে বোরো আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার অভিযোগ, গোপনে এডহক কমিটি করা হয়েছে। বোরো আবাদ শেষ হলে এবং নতুন কমিটি গঠন করে খালটির পুনঃখনন করার দাবি তার।

সহকারী প্রকৌশলী হাসানুর রহমান বলেন, ‘আমিনুল ইসলামসহ কতিপয় ব্যক্তি আমাদের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় স্থানীয়দের ক্ষেপিয়ে খাল খনন কাজে বাধা দেয় এবং আমাদের ওপর হামলা করে।’

এলজিইডি শেরপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানের ভাষ্য, আমিনুলসহ স্থানীয় কয়েকজন তাদের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না পেয়ে কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে তাঁর অফিসের লোকদের ওপর হামলা করে।

নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল আলম ভুঁইয়া জানান, মামলা নিয়ে প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।