বিহারে মদ নিষিদ্ধ হওয়ায় কেউ খাচ্ছে সাবান, কেউবা মরিচ!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের বিহার রাজ্যে দুদিন হলো সব ধরনের মদ নিষিদ্ধ। হঠাৎ করে মদ নিষিদ্ধ হওয়ায় মদপায়ীরা অস্বাভাবিক আচরণ করছেন। আসক্তির টানে কেউ খাচ্ছেন সাবান, কেউ মরিচ, আবার কেউবা হাতের নাগালে যা পাচ্ছেন, তাই খেয়ে ফেলছেন। মদের জন্য যাচ্ছেতাই করে ফেলছেন আসক্ত ব্যক্তিরা।
বিহারকে মদমুক্ত রাজ্য করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার মঙ্গলবার রাজ্যে সব ধরনের মদ নিষিদ্ধ করেন। মদের দোকানগুলো বন্ধ। মদ কেনা-বেচা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ফলে চাইলেই কেউ আর মদ বিক্রি করতে পারছেন না, কিনতেও পারছেন না।
এ অবস্থায় মদে আসক্তদের নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো। মদ না পেয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করছেন, এমন অনেক লোককে তাদের পরিবার হাসপাতালে নিয়েছে। চিকিৎসকরা এ ধরনের আসক্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, মদ না পেয়ে আসক্তরা স্নায়বিক দুর্বলতা বোধ করছেন। তাদের চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হচ্ছে। এক ব্যক্তি তরল সাবান খেয়ে হাসপাতালে গেছেন।
স্টেট হেলথ সোসাইটি অব বিহার (এসএইচএসবি) জানিয়েছে, রাজ্যজুড়ে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত ৩৮টি মাদক নিরাময়কেন্দ্রে শুধু বুধবার ৭৪৯ জন চিকিৎসা নিতে আসেন। আসক্ত এসব লোক মদ না পেয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করছেন।
নিরাময়কেন্দ্রে আসা ৩০ বছর বয়সি এক ব্যক্তি তার পরিবারের সদস্যদের চিনতে পারছেন না। প্রতিদিন তিনি ৬০০ থেকে ১২০০ এমএল দেশি মদ পান করতেন, এখন যা পাচ্ছেন না। আওরঙ্গবাদের একটি মাদক নিরাময়কেন্দ্রের চিকিৎসক আর কে সিং জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তিকে যখন কেন্দ্রে আনা হয়, তখন তার শরীর কাঁপছিল। তিনি টলছিলেন। দাঁড়িয়ে থাকার মতো অবস্থা ছিল না তার।
বুধবার একটি টেলিভিশন চ্যানেলে দেখানো হয়, এক আসক্ত ব্যক্তি মদ না পেয়ে তরল সাবানের কৌটা এমনভাবে চুষছিলেন, যেন মদ পান করছেন। কিছু নিরাময়কেন্দ্র জানিয়েছে, অনেক ব্যক্তি আসক্তি মেটাতে কাগজ খাচ্ছেন। অনেকে আবার ব্যাথানাশক ওষুধ খাচ্ছেন। আসক্তদের এমন সব অস্বাভাবিক আচরণ এখন বিহারের অলিতে গলিতে দেখা যাচ্ছে।
পাটনার একটি বেসরকারি মাদক পুনর্বাসনকেন্দ্রের কাউন্সিলর রাখি শর্মা জানিয়েছেন, নালন্দা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এক কিশোরকে তাদের কাছে পাঠিয়েছে। ওই কিশোর সহিংস আচরণ করছে। যাকে পাচ্ছে ধরছে, মারছে, জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলছে; এমন কি চিকিৎসকদের ওপরও তেড়ে আসছে।
এদিকে এসএইচএসবি আরো জানিয়েছে, মদ না পেয়ে ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক নিয়েছেন, এমন ৯৬ জন ব্যক্তি বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মদপায়ীদের স্বাভাবিক জীবনের ফিরিয়ে আনতে বিহারে ১৫০ প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও ৪৫ জন কাউন্সিলর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বিহারের প্রাক্তন এক সরকারি কর্মকর্তা সরকারের মদ নিষিদ্ধের আইন চ্যালেঞ্জ করে পাটনা হাইকোর্টে মামলা করেছেন। তিনি মনে করেন, জনগণ কী খাবে, কী পান করবে, তা ব্যক্তির স্বাধীনতা। খাদ্যাভ্যাস, পানাভ্যাস কেউ নির্ধারণ করে দিতে পারে না। তবে মামলার শুনানির দিন এখনো ধার্য করেননি আদালত।
