রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি বিভিন্ন দলের
নিজস্ব প্রতিবেদক : জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সুবিচার নিশ্চিতে রায় দ্রুত কার্যকর করা জরুরি।
এবি পার্টি
এই রায়কে শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতের বিজয়ের ইতিহাসের পুনঃ সত্যায়ন হিসেবে উল্লেখ করেছে এবি পার্টি। গতকাল রায়ের পর এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দলটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, অহংকার পতনের মূল; সত্য সমাগত মিথ্যা অপসৃত; চোরের দশ দিন গৃহস্থের একদিনÑ এসবকে যারা এতদিন শুধু নীতিবাক্য মনে করতেন তারা আজ বুঝতে পারছেন, এসব নীতিবাক্য বারবার ঐতিহাসিকভাবে সত্য প্রমাণিত।
খেলাফত মজলিস
খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ বলেছেন, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা বিগত ১৬ বছরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধ সংঘটিত করেছিল। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত করেছিল। হাজারো শহীদের রক্তের প্রতি ন্যায়বিচারের স্বার্থে শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের সর্বোচ্চ শাস্তি কাম্য ছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ন্যায়বিচারের স্বার্থে দীর্ঘ সময় ধরে সাক্ষী ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও তার এক সহযোগীর অপরাধের প্রমাণ পেয়েছেন এবং আজ (সোমবার) সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছেন। এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিফলিত হয়েছে। রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে জনগণকে গুম-খুনের বিরুদ্ধে এই রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা প্রত্যাশা করছি ন্যায়বিচারের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সব অপরাধীর দণ্ড কার্যকর করা হবে। দণ্ডপ্রাপ্তদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের স্বৈরশাসন, জুলুম-নির্যাতন, গুম-খুন ও গণহত্যার দায়ে সাবেক ফ্যাসিস্ট শাসক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত ঐতিহাসিক রায় দেশের জনগণের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ন্যায়বিচারের প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হবে। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এই রায়কে আল্লাহর ন্যায়বিচারের সুস্পষ্ট প্রকাশ হিসেবে মূল্যায়ন করছে।
আ স ম রব
জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, এ রায় গণ-অভ্যুত্থানোত্তর আইনের শাসনভিত্তিক কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে একটি তাৎপর্যপূর্ণ দৃষ্টান্ত ও অগ্রগতি। বিশেষত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় নির্ধারণÑ জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আন্দোলনের সময় যারা শহীদ, আহত, নির্যাতনের শিকার এবং গুমে নিখোঁজ হয়েছেন; তাদের পরিবারগুলোর জন্য এই রায় ন্যায়বিচারের আশ্বাস। ঘোষিত রায় আমাদের মনে করিয়ে দেয়, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে অবস্থান করলেও কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়Ñ এটাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি।
ইসলামী আন্দোলন
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বলেছে, ন্যায়বিচার প্রতিফলিত হয়েছে এবং এই রায় দেশে স্বৈরতন্ত্র রোধে মাইলফলক হয়ে থাকবে। মজলুম জনতার প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে জনতার ওপর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে এই রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। রায়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে দলটির মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুস আহমদ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদ অনেক বিস্তৃত অপরাধচক্র গড়ে তুলেছিল। সেই চক্রের প্রধানের বিরুদ্ধে একটি মামলার রায় হলো। পর্যায়ক্রমে সব অপরাধীকেই শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলন
গণসংহতি আন্দোলনÑ জিএসের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার রায় শত শত শহীদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে যে ন্যায়বিচারের দাবি উঠেছিল, সেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে নেবে বলে আমরা আশা করি। তারা বলেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না করে দেশ থেকে ফ্যাসিবাদকে সম্পূর্ণরূপে বিতাড়িত করা সম্ভব হবে না। শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ দেশের শিশু, তরুণ, বৃদ্ধদের নির্বিচারে হত্যা করার পর আজ পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গেয়ে চলেছে। বাংলাদেশে গুম, খুন, লুটপাট, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, গণহত্যাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার ঘটায়নি। প্রত্যেকটি ঘটনার তদন্ত করে অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে বাংলাদেশের মানুষের প্রাপ্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা দেশের আইন-আদালতের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আমরা আশা করি আদালত নির্মোহভাবে এই বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে নিয়ে যাবেন।
হেফাজতে ইসলাম
হেফাজতে ইসলাম বলেছেÑ সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও বিতর্কমুক্ত বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইন্ডিয়ায় পলাতক গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়েছে। শহীদদের পরিবারে প্রশান্তি এসেছে। শোকে পাথর হওয়া মজলুমদের চোখ ও হৃদয়গুলো আনন্দে সিক্ত হয়ে উঠেছে। এ জন্য আল্লাহর দরবারে আমরা শুকরিয়া আদায় করছি। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতির মাধ্যমে এই প্রতিক্রিয়া জানায় হেফাজতে ইসলাম। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জুলাই গণহত্যা ছাড়াও পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও শাপলা চত্বরের গণহত্যার বিচার দ্রুত শুরু করতে হবে। ভারতের চিহ্নিত সেবাদাস জাতীয় পার্টি ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে বিচারপূর্বক আজীবন নিষিদ্ধ করতে হবে। অন্যথায় চব্বিশের পরাজিত শক্তি ইন্ডিয়ান আধিপত্যবাদ ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বারবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।
স্বাগত জানাল গণঅধিকার পরিষদ
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, এই রায়কে গণঅধিকার পরিষদ স্বাগত জানাচ্ছে, একই সঙ্গে আমাদের দাবিÑ দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা হোক। তিনি বলেন, এই রায়কে প্রাথমিক বিজয় বলা যায়, রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্ত বিজয় হবে না। শুধু শেখ হাসিনা কিংবা আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল নয়, ভারতে পলাতক সব আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের দোসরদের ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। একই সঙ্গে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলের রাজনীতি স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
কর্নেল অলি
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিÑ এলডিপির প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীরবিক্রম বলেছেন, এই রায়ের মাধ্যমে দেশের ১৮ কোটি মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ হয়েছে। গতকাল রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন তিনি। কর্নেল অলি বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে শহীদ পরিবার ন?্যায়বিচার পেয়েছে। শেখ হাসিনার বানানো আদালতে তার বিচার হওয়ায় এটাই প্রমাণিত হয়েছে যে, অন?্যায় করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। শুধু শেখ হাসিনাকে সাজা দিলেই হবে না, আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মী ও দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার হতে হবে। কোনো অপরাধীই যে আইনের ঊর্ধ্বে নয় সেটির উদাহরণ আজকের এ রায়, আগামী দিনে কেউ যেন কর্তৃত্ববাদী না হয়ে ওঠেন, সেই শিক্ষা দেবে আজকের এই ঘটনা।











