শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৪ মাসেও দেশে আসেনি সৌদি প্রবাসীর লাশ

news-image

সৌদি আরব প্রতিনিধি : সৌদি আরবের আল হারমোলিয়াহ এলাকায় আবদুর রহমান নামে এক বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যুর চার মাস পেরিয়ে গেলেও লাশ দেশে আসছে না। এ দিকে লাশের জন্য বিভিন্ন মহলে ধরনা দিয়েও কোনো উপায় পাচ্ছেন না পরিবার।

আবদুর রহমান লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর লরেঞ্চ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর চর লরেঞ্চ গ্রামের মো. হানিফের ছেলে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সৌদি আরবের রিয়াদের একটি ছাগলের খামারে কাজ করতেন আবদুর রহমান। চলতি বছরের ১ মে পুলিশ কর্মস্থল থেকে রহমানের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে। ৫ দিন পর তার মৃত্যুর খরব পায় তার পরিবার। পরে সৌদি আরবে অবস্থানরত তাদের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, আবদুর রহমানকে খুন করে তার লাশ রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গাড়ি চাপায় মৃত্যু হয়েছে বলে প্রচার করে সেখানকার মালিকপক্ষ। এ ঘটনায় পুলিশ এক সৌদি নাগরিক ও একজন সুদানি নাগরিককে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দিয়েছে বলেও জানান তারা।

গত ১০ মে ছেলের হত্যার বিচার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে সৌদি সরকারের কাছে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আবেদন করেছেন আবদুর রহমানের বাবা মো. হানিফ। ১৪ মে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে তাকে একটি প্রাপ্তি স্বীকার দিয়েছেন।

নিহত আবদুর রহমানের বাবা মো. হানিফ ও ভাই আবুল কাশেম জানান, নিহত রহমানের ভগ্নিপতি সৌদি প্রবাসী মো. ইউসুফ মোবাইল ফোনে জানায়, আবদুর রহমানের লাশ দেশে পাঠানো এবং কীভাবে সে মারা গেছে তা জানার জন্য কয়েকবার সৌদি দূতাবাসে যোগাযোগ করেছেন তিনি। কিন্তু দূতাবাস থেকে মৃত্যুর কারণ জানাতে তেমন কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না।

অন্যদিকে তিনি সৌদি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পুলিশ তাকে জানিয়েছে রহমানের মৃত্যুর প্রতিবেদন বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে। লাশ বর্তমানে সৌদি হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। এখন যা জানাবে সব বাংলাদেশ দূতাবাস জানাবে।

এদিকে নিহত রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িতে মা-বাবা আহাজারি করছেন। তারা ছেলের লাশ দেশে আনতে চান এবং ছেলে হত্যার বিচার চান। সে জন্য তারা সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস এবং সরকারের সহযোগিতা চান।

নিহতের মা লাকী বেগম জানান, সংসারে অভাব অনটনের কারণে ঋণ নিয়ে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ২০১৯ সালে ছেলেকে সৌদি পাঠান। কিন্তু সৌদি গিয়ে জানতে পারেন তার চাকরি মরুভূমিতে উট চরানো। এ কাজ করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবুও কষ্টে সে ২ বছর কাটিয়েছেন। করোনার সময় তার কোনো ছুটি ছিল না। এছাড়া কারণে অকারণে মালিকপক্ষ তাকে মারধর করতো। পরে নির্যাতনে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান। যুক্ত হন নতুন আরেকটি কাজে।

নতুন কাজে মরুভূমিতে ছাগলের খামারে কাজ শুরু করেন আবদুর রহমান। এ সময় সুদানি সহকর্মীদের সঙ্গে তার প্রায়ই ঝগড়া হতো। ঈদের আগের দিন বিকেলে ছেলের সঙ্গে তার শেষ কথা হয়েছে। কথা বলার এক ফাঁকে হঠাৎ করে আবদুর রহমান চিৎকার দিয়ে বলে উঠেন ‘মা আজরাইল আসছে।’ এ কথা বলেই ফোন কেটে দেয়। এরপর থেকে তাকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি।

ঘটনাটি তিনি তার মেয়ের জামাই সৌদি প্রবাসী মো. ইউসুফকে জানান। পরে ইউসুফ আল হারমোলিয়াহ এলাকায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন আবদুর রহমানের সঙ্গে তার সুদানি এক সহকর্মীর ঝগড়া হয়েছিল। ঝগড়ার একদিন পর রহমানের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। ইউসুফকে সেখানকার স্থানীয়রা জানায়, আবদুর রহমানকে খুন করা হয়েছে। পরে ইউসুফ স্থানীয় হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তার লাশ দেখে আসেন।

এ বিষয়ে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, নিহত আবদুর রহমানের মৃত্যুর কারণ ও লাশ দেশে আনতে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি আবেদন দেওয়া হয়েছে। তিনি সে আবেদন জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন। গত সোমবার রহমানের পরিবার স্থানীয় এক দালালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।