শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পার্বতীপুরে এই প্রথম সচল হলো রেলওয়ের অচল ইঞ্জিন : বাঁচল ৩০ কোটি টাকা

news-image

 

রংপুর ব্যুরো : দেশে প্রথম বারের মতো ভস্মীভূত একটি রেল ইঞ্জিনকে সচল করেছে দিনাজপুরের পার্বতীপুরের রেলওয়ে কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানার শ্রমিকেরা। যার ফলে সরকারের প্রায় ৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। ২৯৩৩ নম্বরের সচল হওয়া এই ইঞ্জিনটি গতকাল বুধবার বেলা ২টায় কেন্দ্রীয় কারখানা থেকে বের করে (আউট টার্ন) পার্বতীপুর লোকো সেডে হস্তান্তর করা হয়েছে।

পার্বতীপুর লোকোমোটিভ কারখানার প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ কুদরত-ই খুদা জানান, ৮ মাসে এই ইঞ্জিনটি মেরামত করতে খরচ হয়ে ৩ কোটি টাকা। তিনি জানান, একটি ইঞ্জিন ক্রয় করতে খরচ হয় ৩৩ কোটি টাকা। সেই হিসেবে এই অচল ইঞ্জিনটি সচল করে প্রায় নতুন ইঞ্জিনের মতো সচল করে আবার চালু করায় সরকারের সাশ্রয় হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। এই ইঞ্জিনটি মেরামত করে পুনরায় চালু করা তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিলো বলে জানান তিনি।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে দেশে এম আই-১৫ শ্রেণির ১১টি ইঞ্জিন আমদানি করা হয়। জাপান সরকারের আর্থিক সহায়তায় এ ইঞ্জিনগুলো দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানির তৈরি। ইঞ্জিনগুলো দিয়ে দেশের বিভিন্ন যায়গায় মিটারগেজ রেলপথে ট্রেন পরিচালিত হয়ে আসছে। এর মধ্যে একটি ইঞ্জিন (২৯৩৩) ঢাকা-সিলেট রেলপথে আন্তঃনগর পারাবত ট্রেনের সাথে যুক্ত ছিলো। ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর হবিগঞ্জের মাধবপুর নোয়াপাড়া রেলস্টেশনে ওই ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনায় পতিত রেল ২৯৩৩ নম্বর ইঞ্জিনের নিচের অংশে জালানী ট্যাংকারে আগুন লেগে যায়। এতে ইঞ্জিনের ইলেক্ট্রিক্যাল যন্ত্রাংশসহ পুরো ইঞ্জিনটি ড্যামেজ হয়ে যায়।

পুড়ে যাওয়া ইঞ্জিনটি উদ্ধার করে পাহাড়তলী ডিজেল সপে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ওই ইঞ্জিনটি কোনভাবে মেরামত করা সম্ভব না হওয়ায় ২০১৯ সালের ১৫ মে ভারী মেরামতের জন্য পার্বতীপুরের কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানায় পাঠানো হয়।পার্বতীপুর কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানার ডাব্লিউএম (মেরামত) মোঃ ময়েন উদ্দীন সরদার জানান, গত ১৩ ফেব্রুয়ারী সচল হওয়া ইঞ্জিনটি পার্বতীপুর-দিনাজপুরের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো ( ট্রায়াল রান) হয়। তিনি বলেন, গত ৮মাসে ২৩৩ জন শ্রমিক ও কর্মকর্তা অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টা চালিয়ে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় ভস্মীভূত এবং পুরোপুরি অচল হওয়া ইঞ্জিন ভারী মেরামত করে ( জেনারেল ওভার হোলিং) সচল করতে আমরা সমর্থ হই।

কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানার এই কর্মকর্তা আরও জানান, ইঞ্জিনটি সচল করতে যে সকল যন্ত্রাংশের প্রয়োজন পড়েছে তার বেশিরভাগ স্থানীয় উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। ১৯৯২ সালে কেন্দ্রীয় এ লোকোমোটিভ কারাখানাটি স্থাপিত হয়। চলতি ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এ কারখানায় ৪৫৭টি ইঞ্জিনের ভারী মেরামত শেষে রেলবহরে যুক্ত করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ রেলপথের চাটমোহর রেলস্টেশনে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের পুড়ে যাওয়া ইঞ্জিনটিরও ভারী মেরামত চলছে বর্তমানে এ কারখানায়।

বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহা-পরিচালক (রোলিং স্টক) মোঃ মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী সম্পূর্নভাবে ভস্মীভূত হওয়া ইঞ্জিনটি পুনরায় সচল হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সচল হওয়া এ ইঞ্জিনটি খুব শিঘ্রই রেলওয়ের চট্রগ্রাম ডিভিশনে পাঠানো হবে।