শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফুটপাতের দোকানদারদের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়

news-image

নিজস্ব প্রতিবেদক : চাঁদাবাজ চক্র দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সবজি ও ফলের দোকান, ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান, লেগুনা স্ট্যান্ড এবং পরে পণ্যবাহী গাড়ী থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করে আসছে। কেউ চাঁদা দিতে রাজি না হলে তারা জীবননাশের হুমকি প্রদর্শন করে। ফুটপাতের দোকানদারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করে এসব। এই কাজে চার থেকে পাঁচ জনের একটি গ্রুপ জড়িত। সুযোগ পেলেই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয়।

ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে পৃথক অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজ ও ছিনতাই চক্রের ৪১ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিইও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, রাজধানীর সবুজবাগ, খিলগাঁও, হাতিরঝিল, তেজগাঁও, মুগদা, শাহবাগ, মতিঝিল, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর ও পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে ৩৩ জন চাঁদাবাজ ও ৮ জন ছিনতাকারী।

এ সময় তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির মাধ্যমে আদায় করা নগদ ১ লাখ ২ হাজার ৫৩৩ টাকা, ৫৩টি মোবাইল, ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত ৯টি সুইচ গিয়ার, ১০টি এন্টিকাটার, ১০টি ক্ষুর, সাতটি চাকু, দু’টি চাইনিজ কুড়াল, চারটি রামদা অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

 

গ্রেপ্তাররা হলো- সোলাইমান (২৫), নুর হোসেন (৩০), মো. শাহজালাল (২২), আলী হোসেন (৪০), আরিফ হোসেন (১৭), সাইফুল ইসলাম (৫৭), মাসুম (২৭), মো. শিবলু (২৫), মোক্তার হোসেন (৩০), মো. মুন্না (২০), মো. সাইমন (৩২), মো. রনি (২৫), মো. আব্দুল মান্নান (৪৪), মো. বাবুল হাওলাদার (৫০), মো. আবুল কাশেম (৪৫), নুরুল হক (৪০), মো. রাকিব খান (২০), মো. মাসুদ (৪০), মো. জনি (৩২), মো. আকাশ (২০), মো. নাইম (১৯) ও মাজাহারুল ইসলাম ওরফে তামিম (১৮)।

এছাড়াও গ্রেপ্তার হয়েছে- মো. রাকিব (১৯), মো. নাইম বেপারী (১৯), মো. সজীব (২৫), বাবুল হোসেন (৩২), ইসমাঈল (৩৫), মো. রবিন (২৮), মো. সেলিম (৪০), মো. ইয়াসিন আরাফাত (২২), মো. নুর হোসেন (৬৫), মহব্বত হোসেন (৪০), মো. লিটন (৪২), মো. আরিফ (২৫), সাব্বির হোসেন জুবায়ের (২০), হেমায়েত হোসেন মামুন (৩৮), মো. ফারুক (৫০), শাহ পরান (২৬), কামরুল হাসান (২৫), মো. মিজান (২৪) ও মো. সেলিম (৩৬)।

গ্রেপ্তারের সময় আসামীদের কাছ থেকে ৫৩টি ছিনতাইকৃত মোবাইলফোন, ৯টি সুইচ গিয়ার, ১০টি এন্টিকাটার, ১০টি ক্ষুর, ৭টি চাকু, ২টি চাইনিজ কুড়াল, ৪টি রামদা এবং চাঁদা সংগ্রহের ১ লাখ ২ হাজার ৫৩৩ টাকা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য তুলে ধরে আরিফ উদ্দিন বলেন, চাঁদাবাজ চক্র দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সবজি ও ফলের দোকান, ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান, লেগুনা স্ট্যান্ড এবং পরে পণ্যবাহী গাড়ী থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করে আসছে। ফুটপাতের দোকানদারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করছে। এই কাজে চার থেকে পাঁচ জনের একটি গ্রুপ জড়িত।

 

এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে ছিনতাই চক্রের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুযোগ পেলেই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। ইফতারের সময় এবং সেহেরির পর তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের ছিনতাইকাজে বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতে দ্বিধা বোধ করে না।

ওয়ারী থানার কাপ্তান বাজারে চাঁদাবাজি শুরু হয় মূলত রাত ১২ টার পর থেকে ভোররাত পর্যন্ত। মুরগি বহনকারী কোন গাড়ি এই বাজারে প্রবেশ করার সাথে সাথেই গাড়ির ধরন ও মুরগির পরিমান এর উপর নির্ভর করে চাঁদার পরিমান ঠিক করে দেয়া হয় এবং জোরপূর্বক তা আদায় করা হয়। কেউ যদি চাঁদা না দেয় তাহলে তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। যেমন উক্ত গাড়ির মুরগি আনলোড/বিক্রিতে ইচ্ছাকৃতভাবে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয়। তাছাড়াও যেসব গাড়িতে তুলনামূলকভাবে ছোট/অসুস্থ/মৃত মুরগি পাওয়া যায় তাদেরকে বেশি চাঁদা দিতে হয়। প্রতিরাতে এখান থেকে কয়েক লাখ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করা হয়।

রমনা থানার শান্তিনগরে মূলত রাস্তার ধারে ভাসমান দোকান থেকে নির্দিষ্ট হারে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করা হয়। সকাল ও বিকাল দুই শিফটে চাঁদা আদায় করা হয়। এই কাজে ৪/৫ জনের একটি গ্রুপ জড়িত। প্রতিদিন এখান থেকে প্রায় লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়।

চাঁদার টাকা না দিলে আসামীরা নিরীহ দোকানদারদেরকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি প্রদান করে এবং তাদের হাতে থাকা লাঠি দিয়ে মার পিট করে। তাদের কথা মত কেউ চাঁদার টাকা না দিলে দোকান বসতে দেয়া হবে না বলেও দোকানদারদের হুমকি দেয়া হয়। লেগুনা স্ট্যান্ডে তাদের কথা মত কেউ চাঁদার টাকা না দিলে এই রুটে কোন লেগুনা চলতে দেয়া হবে না বলে হুমকি প্রদান করে। তখন লেগুনা চালকরা পেটের দায়ে বিনা প্রতিবাদে চাঁদা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়। এ সকল চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় আনার ফলে নিরীহ দোকানদার ও লেগুনা চালকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর খিলগাঁও, মালিবাগ রেইল গেইট, দৈনিক বাংলা মোড়, পীরজঙ্গি মাজার ক্রসিং, কমলাপুর বটতলা, মতিঝিল কালবার্ট রোড, নাসিরের টেক হাতিরঝিল, শাহবাগ, লেবাগ, রাজউক ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং পল্টন মোড়, গোলাপ শাহর মাজার ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, আব্দুল গণি রোড, মানিকনগর স্টেডিয়ামের সামনে, নন্দীপাড়া ব্রিজ ও বাসাবো ক্রসিং এলাকায় সন্ধ্যা হতে ভোর পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেশি দেখা যায়।

 

এ জাতীয় আরও খবর

সালমান শাহ-শাকিব খানের মতোই জয়কে টার্গেট করা হলো : স্ত্রী নীড়

মৃত্যুর দু’বছর পর ব্রুনাই থেকে ফিরছে দুই বাংলাদেশির লাশ

এক মিনিটের জন্য শেষ বিসিএসের স্বপ্ন, হাউমাউ করে কান্না

জাতীয় পার্টির কোনো রাজনীতি নেই: ফিরোজ রশিদ

গরমে সরবরাহ কম, আরও বেড়েছে সবজির দাম

পাটগ্রামে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

বিএনপির ৭৫ নেতা বহিষ্কার

১০ কোটি টাকার অনিয়ম, পাবনায় অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক

‘পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে বিএনপির শিক্ষা নেওয়া উচিত’

‘মাশা আল্লাহ’ লিখে যে ‘খোঁচা’ দিলেন মুশফিক

গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার

চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী