শুক্রবার, ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পোশাক রপ্তানি বন্ধ হলে চাকরিই চলে যাবে তখন কী করবেন

news-image

নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা ছিল মূলত এক দফা। এ দাবি ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ, ঐতিহাসিক দলিল ‘ম্যাগনা কার্টা’। এটি দেশের স্বাধীনতার জন্য জনগণকে প্রস্তুত করেছিল। তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতার জন্য জনগণকে পুরোপুরি প্রস্তুত করা এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের পক্ষে জনগণকে প্রস্তুত করাই ছিল ছয় দফার মূল লক্ষ্য।

ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনাসভায় সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রসঙ্গক্রমে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চলমান গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়েও কথা বলেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা হয়। এতে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন শেখ হাসিনা। সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গণভবন থেকে সভা সঞ্চালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। অনুষ্ঠানের শুরুতে ছয় দফা দাবি আদায়ে, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের শহীদ এবং অন্যান্য গণ-আন্দোলনের শহীদসহ সীতাকুণ্ড কনটেইনার ডিপোর অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে সবাই এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। এর পর ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও আওয়ামী লীগের শ্রম ও কর্মসংস্থান সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বলেন সঞ্চালক ও প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। কিন্তু তারা বলেন, ছয় দফা দিবসের ইতিহাস দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাই ভালো জানেন। তাই তারা প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে ইতিহাস জানতে চান। পরে দলীয় সভাপতি তার বক্তব্য দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ছয় দফা এক দফায় পরিণত হয় এবং এক দফার পথ ধরেই আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করি। আর ১৯৭০-এর নির্বাচনও ৬ দফার ভিত্তিতেই হয়। যেটা জাতির পিতা ইশারায় দেখাতেন এক হাতের পাঞ্জা এবং আর এক হাতের তর্জনী প্রদর্শন করে। আবার তর্জনীর ওপর জোর দিতেন এক দফার কারণেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার দৃঢ়বিশ্বাস ও আস্থা ছিল, যা প্রকৃতপক্ষে তার সাহস, সততা, বিশ্বাস ও দূরদর্শিতা থেকে এসেছে এবং সে কারণেই আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বঙ্গবন্ধু নিজেই ৬ দফা দাবি প্রণয়ন করেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আলফা ইন্স্যুরেন্সের চাকরি জীবনে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তৎকালীন ব্যক্তিগত সহকারী পরবর্তী সময় ঢাকার নির্বাচিত প্রথম মেয়র মোহাম্মদ হানিফ টাইপরাইটার মেশিনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর উল্লেখ করা পয়েন্টগুলো টাইপ করে গিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই যে চিন্তা চেতনাগুলো জাতির পিতার মধ্যে লালিত ছিল, তার পুরোটাই প্রতিফলিত হয়েছিল ৬ দফা প্রণয়নের মাধ্যমে। আর তার সুযোগও এসে গেল ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের মধ্য দিয়ে, যখন দেখা গেল এই অঞ্চলের মানুষ সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীন, সেই সময় তিনি এই ৬ দফা উত্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা লাহোরে যখন ছয় দফা পেশ করতে যান, নেতারা অনেকে বাধা দিয়েছেন। কিছু দালাল বাঙালিও এটা দিতে দেয়নি। পরে তিনি এটা প্রেসে প্রকাশ করেন, যে কারণে তার জীবনের ওপরও হুমকি আসে। পরে দেশে ফিরে তিনি প্রেস কনফারেন্স করে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে ছয় দফা উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এই ছয় দফা নিয়ে ৩২ দিনের মধ্যে পুরো দেশের প্রত্যেকটা অঞ্চল সফর করেন। তৎকালীন ১৯টা জেলা এবং বিভিন্ন মহকুমায় নিজে সফর করেন। ৩৫ স্পটে নিজে বক্তব্য দিয়েছেন। যেখানে দলের সম্মেলন হয়নি, সেখানেও সম্মেলন করেন। সরকারপ্রধান বলেন, আন্দোলনের জন্য মানুষকে তৈরি করতে আওয়ামী লীগের পক্ষে ৬ দফার ব্যাখ্যা সংবলিত ব্যাপকহারে প্রচারপত্র, লিফলেট, বুকলেট তৈরি এবং বিলি করা হয়। এসব কারণে জনগণ ৬ দফাকে খুব দ্রুত মেনে নেয়।

প্রধানমন্ত্রী জানান, জাতির পিতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর ৭ জুনের হরতাল সফল করার জন্য আমার মা বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন। তিনি আমাদের ছাত্রদের সঙ্গে, সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে হরতাল সফল করার জন্য অনেক কাজ করেছেন। যে হরতালে মনু মিয়া, আবুল হোসেনসহ ১১ জন আত্মাহুতি দেন; অর্থাৎ ৬ দফা দাবির প্রতি জনগণের যে সমর্থন, তা রক্তের অক্ষরেই লিখে দেওয়া হয়।

’৭৫-এর পর দেশে সংঘটিত ১৯-২০টি ক্যুর প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, সে সময়ে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা দেশে বিরাজ করে। দফায় দফায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে এবং আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরই বলতে গেলে এদেশে স্থিতিশীলতা ফিরেছে। এজন্য তার দলের নেতাকর্মীকে অনেক জেলজুলুম অত্যাচার-নির্যাতনও সহ্য করতে হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেল-জুলুম সহ্য করে আজ দেশে স্থিতিশীলতা আমরাই আনতে পেরেছি। তার পরও বারবার প্রচেষ্টা, আমাদের সরকারকে উৎখাত করতেই হবে। সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এই প্রথম ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে দেশে টানা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই দেশের উন্নতি হয়েছে। ক্ষমতায় থেকে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সুযোগ দেওয়ায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনা ভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বিশ্ব মন্দাতে উন্নত দেশগুলোকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওই সব দেশে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। অনেক উন্নত দেশের খাদ্য সংকটের উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইংল্যান্ডের মানুষকে সীমিত আকারে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। ভোজ্যতেল এক লিটারের বেশি কেউ কিনতে পারবে না, এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে। বাংলাদেশে ভর্তুকি দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখনো তার সরকার সবার খাদ্য, ওষুধ, ভ্যাকসিন সবকিছুর সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পেরেছে।

তিনি বলেন, আমরা প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি। রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে তুলেছিলাম। সেই টাকা ভেঙে ভেঙে বিদ্যুৎ, গ্যাস, কৃষি ও স্বাস্থ্যের জন্য ভর্তুকি এবং সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। এভাবে কোনো দেশ করেনি। বিনামূল্যে করোনা টিকা ও করোনা পরীক্ষা করার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তার পরও কেউ যদি গোলমাল করার চেষ্টা করে, আর এই দেশটা যদি একেবারে স্থবির হয়ে যায়, তা হলে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা হবে?

গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েক দিন ধরে দেখতে পাচ্ছি গার্মেন্টস শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। তৈরি পোশাক খাত অস্থির করতে কারা উসকানি দিচ্ছে, সেটা দেখতে হবে। আজ বেতন বাড়াও, এটা-সেটাসহ নানা ধরনের আন্দোলন করতে যায়। পোশাক রপ্তানি যদি বন্ধ হয়, তা হলে কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন ‘আমও যাবে, ছালাও যাবে’। বেতন আর বাড়বে না, তখন চাকরিই চলে যাবে। তখন কী করবেন? যে নেতারা উসকানি দিচ্ছেন, তারা কাদের প্ররোচনায় উসকানি দিচ্ছেন সেটাও একটু ভেবে দেখতে হবে। কারণ যুদ্ধের কারণে এবং বৈশ্বিক মন্দায় ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতাও কিন্তু সীমিত হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, কারও কথায় কেউ পরিবেশ অশান্ত করলে দেশের ক্ষতি নিজেরও ক্ষতি। কেউ অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করলে, আমি বলব শেষে এ কূল, ও কূল, দু-কূল হারাতে হবে। এটাও সবাইকে মনে রাখতে হবে।

‘একটাও মাস্ক পরেনি, সব কয়টার জরিমানা হবে’

আলোচনাসভায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত অনেক নেতাকর্মীর মুখে মাস্ক ছিল না। বক্তব্য দেওয়ার সময় বিষয়টি খেয়াল করেন প্রধানমন্ত্রী। যারা মাস্ক পরেনি, তাদের তিনি হাসতে হাসতে জরিমানা করার কথাও বলেন। এ সময় শেখ হাসিনা তাদের উদ্দেশে হাসতে হাসতে বলেন, ‘একটাও মাস্ক পরে নাই। যেগুলো মাস্ক পরে নাই, সব কয়টার জরিমানা করা হবে।’ দলীয় সভাপতির এমন বক্তব্য শুনে অনেক নেতাকেই তড়িঘড়ি মাস্ক পরতে দেখা যায়। দলীয় সভাপতি এর আগেও দলের একাধিক অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের মাস্ক না পরার কারণে সতর্ক করেন।

 

এ জাতীয় আরও খবর

সরকার পরিবর্তনে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই : মির্জা ফখরুল

‘বিদেশি ঋণ পরিশোধের অবস্থায় নেই সরকার’

ছোট ভাই শাহাদাতকে ‘কুলাঙ্গার’ বললেন মেয়র কাদের মির্জা

ঋণের সুদ দিতে গিয়ে হিসাব মেলানো কঠিন হচ্ছে, গভর্নরকে জানালেন ব্যবসায়ীরা

তাপপ্রবাহ বাড়ছে, হিট স্ট্রোকে ৩ জনের মৃত্যু

কোপা আমেরিকায় শাকিরার গান ‘পুন্তেরিয়া’

এক অভিযানেই ইসরায়েলের ১২ সেনা নিহত: হামাস

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

সৌদি পৌঁছেছেন ২১ হাজার হজযাত্রী

বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা একসময় বিশ্বে রোল মডেল হবে : আহসান হাবিব

বুদ্ধ পূর্ণিমা ঘিরে কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই : ডিএমপি কমিশনার

শেয়ার হস্তান্তরে স্থিতাবস্থা : এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ বন্ধ